বিসিবি একাডেমি ভবনের কনফারেন্স রুমে ঢুকেই চমকে উঠার অবস্থা। মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাসির হোসেনরা সামনে হাত তুলে শপথ পাঠ করছেন! বিস্ময় জাগানো বিষয়। স্কুল জীবনে ফিরে গেলেন কি ক্রিকেটাররা? না। জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে কাল শপথ নিয়েছেন ৩২ ক্রিকেটার। ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে যে প্যাকেজ মনোবিদ আলী আজহার খানের, তার একটি শপথ পাঠ। দেশের বাইরে থাকায় উপস্থিত ছিলেন না সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোযোগী ছাত্রের মতো ক্লাস করেছেন ক্রিকেটাররা। এই দীর্ঘ সময়ে ক্রিকেটাররা মনোযাগী ছাত্র ছিলেন পিক পারফরম্যান্স কোচ আলী আজহারের। যিনি তিনদিন টাইগার ক্রিকেটারদের মানিসকভাবে উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত এবং আত্দবিশ্বাসী হওয়ার পথ বাতলে দিবেন। কাল ছিল সেই প্যাকেজের প্রথম দিন। আজ ও কাল বাকি দুইদিন ক্রিকেটারদের ক্লাস নিবেন কানাডা প্রবাসী এই মনোবিদ।
আজহার বাংলাদেশেরই সন্তান। এক সময় ছাত্র ছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি)। তার ছোট ভাই সাবি্বর জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। শিক্ষাজীবনে আজহার টেনিস খেলতেন। খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। টেনিসের কোচেস লেবেল-২ করেছেন ইংল্যান্ড থেকে। সেখানে পড়াশোনা করেছেন স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের উপর। কাল ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন টানা ক্লাস নিয়ে। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের এই প্রথম কোনো মনোবিদ ক্লাস নিলেন, তা নয়। এর আগে কোচ জেমি সিডন্সের সময় মনোবিদ হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন সালাউদ্দিন টিটো। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপে কাজ করেছেন ভারতীয় মনোবিদ সৌমেন্দু সাহা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দলেই একজন করে মনোবিদ রয়েছেন। তারা ক্রিকেটারদের আত্দবিশ্বাসী করে তুলেন। উজ্জীবিত করে তুলেন ভালো পারফরম্যান্সের জন্য। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ উঠা-নামার মধ্যেই থাকছে গত কয়েক বছর ধরে। এক সিরিজ ভালো খেলছে তো পরের সিরিজেই আবার নিম্নগামী। ২০১২ সালে এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, শ্রীলঙ্কার মাটিতে লড়াকু পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। কিন্তু ঘরের মাটিতে সেই দলই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, এশিয়া কাপ ও টি-২০ সিরিজে বাজে পারফরম্যান্স করে। বিশেষ করে এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের খেলা দেখে মনে হয়েছেন মানসিক চাপে তারা ভেঙে পড়েছেন। এ থেকে উত্তোরণের জন্যই বিসিবি শরণাপন্ন হন আলী আজহার খানের। আলী আজহার কাল ক্রিকেটারদের সাতঘণ্টার ক্লাসে বুঝিয়েছেন, চাপ কিভাবে সামাল দিতে হয়। কিভাবে চাপকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য পাওয়া যায়।
কাল ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলার পরে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বলেন, 'যে কোনো মানুষই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা ভোগেন পেশার কারণে। কারণ পারফরম্যান্সের উঠা-নামা থাকলেই এমনটি হয়। এটা আসলে দোষের নয়। তবে আমি চাচ্ছি এ চাপগুলোকেই ক্রিকেটাররা যাতে কাজে লাগান। কাজে লাগিয়ে সাফল্য পান।' মনোবিদের ক্লাস করে খুশি জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। জাতীয় দলের ওপেনার এনামুল হক বিজয় বলেন, 'ওনি যেভাবে আমাদের বুঝিয়েছেন, আমি বিশ্বাস করি এটা আমাদের অনেক কাজে দিবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, টানা ক্লাস নেওয়ার পরও আমরা বোর ফিল করিনি। উপভোগ করেছি।' কালকের ক্লাসের পর বিজয়ের মনে হয়েছে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পথটাও খুঁজে পেয়েছেন, 'অনেক সময় যে কাজটা করা উচিত, সেটা করতে পারি না। কিভাবে সে কাজগুলো করতে হবে, সেগুলো বুঝতে পেরেছি। আসলে আমাদের বুঝানো হয়েছে, কিভাবে আমরা মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে পারি।'
আগামী দুই দিন আজহার ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলাদাভাবে বসবেন। সেখানে তিনি তাদের সমস্যাগুলো শুনবেন। এরপর রাস্তা ঠিক করে দিবেন। মুশফিকদের পর তিনি তিনদিন সালমাদের সঙ্গে বসবেন। এরপর দেশ ছেড়ে যাবে ২৮ এপ্রিল।