অ্যাথলেটিকস এক সময় সম্ভাবনা ও জনপ্রিয়তা দুটোই ছিল। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে জাতীয় প্রতিযোগিতা ছাড়া বিভিন্ন টুর্নামেন্টে প্রচুর দর্শকের সমাগম ঘটতো। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ খেলার জোয়ার ছিল চোখে পড়ার মতো। অথচ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে টার্ফ নির্মিত হলেও অ্যাথলেটিকস ঘিরে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের অ্যাথলেটিকস। কেন এ অবস্থা এ নিয়ে আলাপ হচ্ছিল দেশের এক সময়ে ট্র্যাক কাঁপানো মহিলা অ্যাথলেট রাজিয়া সুলতানা অনুর সঙ্গে। ১৯৮২ সালে তিনি ট্র্যাক থেকে বিদায় নেন। অ্যাথলেটে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সালে অনু জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তিনি অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য।
সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অ্যাথলেটিকসে করুণ হাল কেন?
অনু : করুণ হাল আমি একথা কখনো বলব না। আসলে নানা জটিলতায় এ খেলার গতি থেমে গেছে। দেখেন সারা বিশ্বে অ্যাথলেটিকসের গুরুত্ব অনেক। অথচ বাংলাদেশে এর কোনো গুরুত্বই নেই। যা করা হয় ফেডারেশনের উদ্যোগে। ভালো পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকার নজর দিলে আন্তর্জাতিক আসর থেকে অবশ্যই অ্যাথলেটরা সাফল্য বয়ে আনতে পারবে। গুরুত্ব পাবে না আর বলা হবে অ্যাথলেটিকস পিছিয়ে যাচ্ছে- তা আমি মানব না।
নতুন নতুন অ্যাথলেট বের হচ্ছে না কেন?
অনু : এটাও ভুল ধারণা। দেশে সম্ভাবনাময় অনেক পুরুষ ও মহিলা অ্যাথলেট রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে নিজেদের তুলে ধরতে পারছে না। শুনতে হয়ত খারাপ লাগবে তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি, ক্রিকেট ও ফুটবলে যে সুবিধা দেওয়া হয় তার ছিটেফোঁটাও অন্য খেলাতে দেখা যায় না। স্বাভাবিকভাবে ছেলেমেয়েরা অন্য খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যে খেলায় অর্থ আছে সে খেলার প্রতি মনোযোগী হবে এটাই স্বাভাবিক। অনেকে বলেন, সাফ গেমসে অ্যাথলেটে স্বর্ণ জেতাটা এখন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বিদেশি নয় দেশে যে কোচ আছে তাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের অ্যাথলেট তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। পাঁচ বছর উন্নতমানের ট্রেনিং দিলে সাফ গেমস কেন এশিয়া বা এশিয়ান গেমসে ও পদক জেতা সম্ভব। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে নিয়মিত অ্যাথলেটিকসে প্রতিযোগিতা হলে আরও নতুন নতুন অ্যাথলেট বের হয়ে আসবে। একটা ব্যাপার মনে রাখবেন সাফে আমাদের অ্যাথলেটদের দ্রুততম মানব হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। সুতরাং উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে অবশ্যই সাফল্য আসবে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টার্ফ বসানোর পরও অ্যাথলেটিকসে জোয়ার নেই?
অনু : আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টার্ফ বসানো হোক। সে দাবি অনেক আগেই মিটেছে। কিন্তু জোয়ার সেভাবে সৃষ্টি হয়নি। হবেই বা কীভাবে? ফান্ডের কারণে আমরা বেশি প্রতিযোগিতা করতে পারি না। আর প্রতিযোগিতায় যেসব দল অংশগ্রহণ করে থাকে সেখানে হাতে গোনা কটি সার্ভিস দল ছাড়া অ্যাথলেটদের তেমন পারিশ্রমিক দেন না। পাকিস্তান আমলে মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স ও আজাদের মতো জনপ্রিয় দলগুলো অ্যাথলেটিকসে অংশ নিত। প্রতিযোগীরা ভালো অর্থও পেত। এখনতো সে অবস্থা নেই। সুতরাং জোয়ার সৃষ্টি হবে কীভাবে।
অ্যাথলেটিকস উন্নয়নে কি করা দরকার?
অনু : একেবারে সোজা কথা এক্ষেত্রে সরকারের ভালো সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। তারাই কোনো কোম্পানিকে ঠিক করে দিক দীর্ঘসময়ে পৃষ্ঠপোষকতায়। এতে করে অ্যাথলেটদের ভালো করার ব্যাপারে উৎসাহ বাড়বে। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে অ্যাথলেটিকসে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। ফেডারেশন যা করছে তাতে আমি একজন অ্যাথলেট হিসেবে সন্তুষ্ট।