আপনার রক্তচাপ কত তা জেনে নেওয়া স্বাস্থ্য সচেতনতার একটি অংশ, বিশেষ করে যদি আপনার বয়স ৩০ বছরের অধিক হয়ে থাকে। রক্তচাপ নির্ণয়ের জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা রক্তচাপ পরীক্ষা করে একাধিকবার উচ্চ রক্তচাপ নির্ণিত হলে আপনি হাই প্রেসার/উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বলে ধরে নিতে হবে। হাই প্রেসার সাধারণভাবে নীরব ব্যাধি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কারণ অধিকাংশ হাই প্রেসারের রোগীর কোনোরূপ শারীরিক উপসর্গ থাকে না বা রোগী কোনোরূপ অসুবিধা বোধ করেন না, বিশেষ করে প্রাথমিক অবস্থায়। কোনোরূপ শারীরিক কষ্ট বা অসুবিধা ছাড়াই আপনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকবেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে উচ্চ রক্তচাপ আপনার শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে থাকবে যা আপনার অনুভূতির বাইরে থাকবে। তাই তো একে বলা হয় নীরব ঘাতক। যখন ওইসব অঙ্গ মারাত্মক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তখন আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হবে। হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্ক, চোখ ও রক্তনালী উচ্চ রক্তচাপের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। তবে প্রাথমিক অবস্থা থেকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখলে ওইসব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ঔষধ গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস গড়ে তোলা, জীবনযাপনে কিছু কিছু প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান মেনে চলা, নিয়ন্ত্রিতভাবে কায়িক শ্রমের বা হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস রপ্ত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা অনেককেই দেখি তার জীবনের কোনো এক সময়ে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণিত হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ঔষধ সেবন শুরু করেছেন এবং তা বছরকে বছর চালিয়ে যাচ্ছেন। কালেভদ্রে কখনো অসুস্থতা বোধ করলে প্রেসার চেক করে নিজেই ওই ঔষধের মাত্রা কম অথবা বেশি করে গ্রহণ করতে থাকেন। এরূপ অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ না করারই শামিল। কারণ চিকিৎসা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হল রক্তচাপ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। তাই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে এ দুটি কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করাকে সু-চিকিৎসা বলা যাবে। সাধারণভাবে হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নীরবেই বিদ্যমান থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তবে কারো কারো মেজাজ খিটমিটে ভাব, শারীরিক অসুস্থ্যতা অনুভব, চিন্তাভাবনার অস্বাভাবিকতা, মাথা ঘোরা, মেয়েদের বেলায় বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, প্রায়ই মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা অনুভব করা এবং আবার ঠিক হয়ে যাওয়া, বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হওয়া। বিশেষ করে পরিশ্রমকালীন সময়ে বুক ধড়ফড় করা, মৃদু শ্বাসকষ্ট হওয়া, মারাত্দক অবস্থা হিসেবে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়া, ষ্ট্রোক হওয়া, প্যারালাইসিস হওয়া, কিডনি ফেইলুরের লক্ষণ হিসেবে চরম রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া ইত্যাদি ।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ।