দেশের প্রধান তিন খেলাতেই করুণদশা। না আছে মান, না আছে দর্শক। তারপর আবার নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে সংকটে বন্দী হয়ে আছে এ তিন খেলা। ফুটবলে বাংলাদেশের মান আগে থেকেই নেমে গেছে। আন্তর্জাতিক আসরে মাঠে নামা মানেই ভরাডুবি। ঘরোয়া ফুটবলেও নিভু নিভু অবস্থা। মানতো নেই, গ্যালারিতে থাকছে না দর্শক। অনেকে তাই বলেন, লাইফ সার্পোটে বেঁচে আছে দেশের ফুটবল। এ করুণদশা দেখে অনেকে বিশ্বাস করতে চান না ফুটবলই এক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ছিল। মানোন্নয়নে ফুটবলে বিশাল নির্বাচিত কমিটি থাকলেও কোনো কাজে আসছে না। লাখ লাখ টাকার বেতনে দুই ডাচকে প্রশিক্ষক করা হলেও ফান্ডের অভাবে তাদের বেতন মিলছে না। ঢাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ জেলাতে ফুটবলের দেখা নেই। অথচ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কড়া ভাষায় বলেছিলেন, যে সব জেলা নিয়মিত লিগ করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিলেটে ফুটবল একাডেমি কবে চালু হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হ-য-ব-র-ল অবস্থা বলতে যা বুঝায় তাতেই বন্দী ফুটবল। এরপরও সালাউদ্দিন স্বপ্ন দেখছেন ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপে মাঠে নামার।
হকিতেও সুখবর নেই। গেল অ্যাডহক ও বর্তমান নির্বাচিত কমিটি এ খেলাকে চাঙ্গা করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও নানা দ্বন্দ্বে হকিও ঝিমিয়ে পড়েছে। মাঝে ওয়ার্ল্ভ্র লিগে প্রশংসিত নৈপুণ্য প্রদর্শন করাতে এ খেলাকে ঘিরে অনেকে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশেষ একগোষ্ঠীর অপতৎপরতা চাকাকে ঠিকমতো সচল রাখতে দিচ্ছে না। এটা ঠিক এরপরও মাঠে খেলা গড়াচ্ছে ঠিকই কিন্তু দর্শকদের মন ভরছে না। কারণ মোহামেডান, মেরিনার্সের মতো বড় দল ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান কমিটি থাকা অবস্থায় তারা হকির কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। দেশের হকিতে মোহামেডানের অবদানের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলেও তাদের মতো ঐতিহ্যবাহী দল লিগ বয়কট করেছে। দাবি একটাই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত কমিটি গঠন হয়েছে। অথচ নিয়ম মেনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্য প্যানেল বয়কট করাতে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান কমিটি ফেডারেশনের দায়িত্ব নিয়েছে। বাস্তবে এক ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসাতেই এই মহল হকির সুষ্ঠু কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তাদের এসব অপতৎপরতায় গেল এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ফলাফল সুখকর হয়নি। হকির অবস্থা এতটা ভয়াবহ যে ফেডারেশন বাধ্য হয়েছে জাতীয় দলের চার তারকাকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করতে। বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বাংলাদেশ এশিয়ান গেমস খেলবে। কিন্তু যে অসুস্থ পরিবেশ তাতে হকিকে ঘিরে বড় কিছু আশা করা যাচ্ছে না।
এতো গেল ফুটবল আর হকির কথা। যে ক্রিকেটকে ঘিরে দেশবাসীর গর্বের শেষ নেই। সেই খেলাতেও এখন মহা বিপর্যয় নেমে এসেছে। নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয় বারের মতো ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপকে ঘিরে আশা বেড়ে গিয়েছিল। অথচ দুটো আসরে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন টাইগারখ্যাত ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবেই এমন প্রত্যাশা কারোর ছিল না। আশা ছিল ভালো অবস্থানে থাকবে। টেস্টভুক্ত দেশতো আছেই এশিয়া কাপে আফগানিস্তান ও টি-২০ বিশ্বকাপে বাছাই পর্বে হংকংয়ের কাছে হেরে পুরো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন মুশফিকরা। মাঠে ক্রিকেটারদের ভরাডুবির পাশাপাশি বোর্ডেও নাকি চলছে উত্তপ্ত পরিবেশ। যোগ্যাদের প্রাধান্য না দেওয়ায় অনেক নিবেদিত সংগঠক ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ অবস্থায় ক্রিকেট ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না এ সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কেন এমন বিপর্যয় ঘটল এ নিয়ে তদন্ত করা জরুরি থাকলেও বিসিবি এখনো নীরব রয়েছে। এমন হতাশাজনক ফলাফলে শঙ্কা জেগেছে ক্রিকেটে বাংলাদেশ আগের মতো সাফল্য এনে দিতে পারবে কিনা। বড় তিন খেলাতেই হতাশা আর হতাশা। এই অবস্থায় ক্রীড়ামোদীরা শঙ্কিত। কিন্তু যারা দায়িত্বে আছেন তারা কি ভাবছেন সেটাই প্রশ্ন। দেশের বড় তিন খেলা যদি অন্ধকারে ডুবতে থাকে তাহলে ক্রীড়াঙ্গনে কিসের উপর ভরসা রাখবে দেশবাসী। এ ব্যাপারে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে দেশের খেলাধুলা বলতে কিছুই আর থাকবে না।