নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডে হাতের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। যে কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ডে হাতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। এমনকি খাবার গ্রহণের জন্য হাতের বিকল্প নেই। এই হাত সুস্থ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোগশাস্ত্রে হাত সুস্থ রাখার বিভিন্ন ব্যায়ামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধো মুখ বৃক্ষাসন অন্যতম।
এ আসন করার জন্য প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এরপর উবু হয়ে দুহাতের তালু মাটিতে স্থাপন করুন। এখন দুহাতের উপর ধীরে ধীরে শরীরের ভারসাম্য স্থাপন করে পা দুটো মাটি থেকে শূন্যে তুলতে থাকুন এবং মাটির সঙ্গে উল্লম্ফভাবে শরীরটাকে সোজা উপরে খাড়া করে রাখুন। এ অবস্থায় শরীর বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকবে অর্থাৎ মাথা নিচের দিকে এবং পা দুটো সোজা শূন্যে উপরের দিকে থাকবে। মাথাটাকে ঘাড় থেকে বাঁকিয়ে সামনের দিকে দেখার চেষ্টা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০ সেকেন্ড থেকে ২০ সেকেন্ড এ অবস্থায় থাকুন। অতঃপর ধীরে ধীরে পা দুটো ভাঁজ করুন এবং কোমর থেকে বাঁকিয়ে সাবধানে পা দুটো ফের মাটিতে নামিয়ে আনুন। প্রয়োজনমত শবাসনে বিশ্রাম নিন।
শীর্ষাসনের সব উপকার এ আসনে পাওয়া যায় এবং হাতের গঠন দৃঢ়, সুন্দর ও সতেজ হয়ে ওঠে। এ আসন অবস্থায় হৃৎপিণ্ড মাথার উপরে থাকে এবং শিরা, উপশিরা, ধমনী সবই বিপরীতমুখী হয় বলে খুব সহজে হৃৎপিণ্ড মস্তিষ্কে প্রচুর রক্ত সঞ্চালিত করতে পারে। মস্তিষ্ক ও গলদেশ রক্তে প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে মাথায় ও গলদেশে অবস্থিত সমস্ত গ্রন্থি ও স্নায়ুজাল রক্ত থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান দ্রুত সংগ্রহ করে সুস্থ ও সক্রিয় থাকতে পারে। মাথার সবগুলো স্নায়ুজাল রক্তে প্লাবিত হয় বলে চোখ, কান, নাক ও দাঁতে সহজে কোনো রোগ আক্রমণ করতে পারে না। লালাগ্রন্থি বা স্যালভারি গ্রন্থির নিঃসরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বলে খাদ্যবস্তু সহজে হজম হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা ইত্যাদি রোগ হতে পারে না। থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে দেহের সমস্ত গ্রন্থি ও স্নায়ুজাল সুস্থ ও সক্রিয় থাকে। কোনোদিন টনসিলের সমস্যা হয় না। আসন অবস্থায় হৃৎপিণ্ড কিছুক্ষণ মাধ্যাকর্ষণের বিপরীত অবস্থানে থাকে এবং মাধ্যাকর্ষণ থেকে অব্যাহতি পায়, ফলে তার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পিনিয়াল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থি সুস্থ ও সক্রিয় থাকে, ফলে মনের শক্তি, স্মৃতিশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি পায়। দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, কর্মবিমুখতা, মাথাধরা, লিকুরিয়া, রক্তাল্পতা, অর্শ, একশিরা, হাঁপানি প্রভৃতি রোগ হতে পারে না। কোনো স্ত্রীরোগ সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। আসনটি নিয়মিত অভ্যাস রাখলে স্থানচ্যুত জরায়ু ঠিক জায়গায় ফিরে আসে।
যাদের কোনো হৃদরোগ বা রক্তচাপ বৃদ্ধিজনিত রোগ আছে, তাদের রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এ আসন করা ঠিক নয়। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের এ আসন করা উচিৎ নয়। প্রাতঃক্রিয়াদি সম্পন্ন না করে, স্নান বা প্রাণায়াম করার ঠিক পরে অথবা কোনো শ্রমসাধ্য ব্যায়ামের পর বিশ্রাম না নিয়ে এ আসন করা কখনো উচিৎ হবে না।