টেনিসকে বলা হয় 'অভিজাত' খেলা। ব্যয়বহুল বলে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা টেনিস খেলার কথা চিন্তাও করেন না। ফুটবল ক্রিকেটের মতো যেখানে সেখানে খেলা যায় না বলে এ খেলার জনপ্রিয়তাও তুলনামূলক কম। তবে দেশ স্বাধীনের পর টেনিসের উন্নতির গ্রাফটা ছিল উর্ধ্বমুখী। জোতিষ লাল চৌহান, শোভন জামালী, খালেদ সালাউদ্দীন তারকা খেলোয়াড়রা গোটা দেশেই পরিচিত ছিলেন। শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন। সিমা, ডেইজি, বৈশাখী, জয়া, সুমী, চম্পা, কলি, রিয়ার মতো তারকাদের কে না চিনত!
টেনিসের সেই স্বর্ণালি দিন এখন আর নেই। উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েছে। তবে ছেলেরা আসলেও গত এক যুগে তারকা কোনো মেয়ে খেলোয়াড়ের নাম শোনা যায়নি। কেন মেয়েরা টেনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, এমন প্রশ্নে সাবেক টেনিস তারকা খালেদ সালাউদ্দীন বলেন, 'মেয়েরা টেনিস বিমুখ এটা বলা ঠিক হবে না। এখনো ফেডারেশনে গেলে দেখতে পাবেন অনেক ছোট ছোট মেয়ে অনুশীলন করছে। ফেডারেশনের রেজিস্টার ঘাঁটলেও দেখতে পাবেন অনেকের নাম। কিন্তু কথা হচ্ছে এই মেয়েরা ছয় মাস কিংবা এক বছরের বেশি সময় খেলে না। তারা এখানে আসে কিছু দিন খেলে, তারপর ফেডারেশনের কাছ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বিদেশে পাড়ি জমায় পড়াশুনার জন্য। অথচ দেখেন সিমা, সুমী কিংবা বৈশাখীরা টানা ৭-৮ বছর টেনিস খেলেছে। বেশি দিন না খেললে তো আর জাতীয় পর্যায়ে আসা সম্ভব নয়।' টেনিসকে ব্যবহার করে অনেকে যে উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমাচ্ছেন, এ ব্যাপারে ফেডারেশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না? 'বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানকে পড়াশুনার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে চান এক্ষেত্রে ফেডারেশন কি করবে?'
সত্তর-আশির দশকে ছেলেদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইডেনের মেয়েরা নিয়মিত টেনিস ফেডারেশনে যেতেন। এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দীন বলেন, 'সত্যি কথা বলতে কি, এখন আর আগের মতো সেই পরিবেশ নেই ফেডারেশনে। আমি যখন খেলতাম তখন সেক্রেটারি ছিলেন ওয়াহেদুল করিম। উনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। সারা দিন ফেডারেশনে পড়ে থাকতেন। কিভাবে ফেডারেশনের উন্নতি হবে তা নিয়ে চিন্তা করতেন। মেয়েরাও মনে করতো ফেডারেশনে একজন অভিভাবক উপস্থিত রয়েছেন। তারা নিরাপদ মনে করতেন। কিন্তু এখনকার ফেডারেশনের সেক্রেটারিরা সময়ই পান না। তারা অন্য চাকরি নিয়েই ব্যস্ত। তারা ফেডারেশনে সময়ই দিতে পারেন না। সে কারণে হয়তোবা মেয়েরা কিংবা তাদের অভিভাবকরা কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।'
ফেডারেশনে মেয়েদের না আসার আরেকটি কারণ উল্লেখ করে খালেদ সালাউদ্দীন বলেন, 'আগে তো এখনকার মতো জ্যাম ছিল না। তাই কেউ গুলশান থেকে আসতেন, কেউ উত্তরা থেকে, কেউবা মিরপুর থেকে। তারা দিনে হয়তো এক ঘণ্টা টেনিসের জন্য বরাদ্দ রাখতেন। এসে খেলে চলে যেতেন। কিন্তু এখন তো তা সম্ভব নয়। অনেক সময় উত্তরা থেকে ফেডারেশনে আসতেই ২-৩ ঘণ্টা লাগে। তাই মেয়েরা আসছে না।' শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেরাও এখন আর দীর্ঘ মেয়াদে টেনিস খেলছে না। তাছাড়া পেশা হিসেবে টেনিসকে বেছে নেওয়া যাচ্ছে না বলেও অনেকে মেধা থাকা সত্ত্বেও টেনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। 'যেখানে ফুটবল ক্রিকেট খেললে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করা যায়, সেখানে কেনই বা শুধু শুধু টেনিস খেলবে।' -অনেক কষ্টের সঙ্গেই কথাটি বললেন সালাউদ্দিন। তবে এভাবে চোখের সামনে প্রিয় টেনিসকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে খুবই হতাশ তিনবার এককে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও ১১বার ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন সাবেক এই তারকা, 'এটা সত্যিই টেনিসের জন্য দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি।'