একটা সময় ছিল যখন গলগণ্ড বা গ্যাগ আমাদের জনগোষ্ঠীতে প্রচুর পরিমাণে পরিলক্ষিত হতো। খাদ্যে আয়োডিন নামক পদার্থের অভাবে এ রোগ পরিলক্ষিত হতো। থাইরঙ্নি এক ধরনের হরমোন যার কাঁচামাল হিসেবে আয়োডিনের প্রয়োজন হতো যা গলার সামনে চামড়ার নিচে থাকা ছোট একটা গ্রন্থিতে (থাইরয়েড গ্রন্থি) তৈরি হয়। যে সব এলাকার মাটিতে আয়োডিনের পরিমাণ কম সে এলাকায় উৎপাদিত খাদ্যবস্তুতে আয়োডিনের পরিমাণ কম থাকায় ওই এলাকার জনগণের থাইরয়েড গ্রন্থি তার কার্যক্রম বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় পরিমাণ থাইরক্সিন উৎপাদন করার প্রয়াসের জন্য থাইরয়েডের আকার বিশালভাবে বৃদ্ধি পেয়ে গলগণ্ড সৃষ্টি হতো। দিনে দিনে খাদ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় এবং বাধ্যতামূলকভাবে খাদ্যলবণে আয়োডিন সংমিশ্রণ করার ফলে এখন গ্যাগ প্রায় নির্মূল হয়েছে বলা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি আক্রান্ত হয়ে থাকে। অটোইমিউন পদ্ধতিতে থাইরয়েড গ্রন্থি আক্রান্ত হওয়ার হার আনুপাতিক হারে অনেক বেশি তবে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়াও প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। অটোইমিউন থাইরয়েড অসুস্থতা মহিলাদের মধ্য বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। বংশগত প্রবণতা এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। যাদের পরিবারে কারও এ রোগ বিদ্যমান তাদের ছেলেমেয়েদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ রোগের দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এক থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটা, দুই থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা কমে যাওয়া। রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধিকে হাইপারথাইরয়েডিজম এবং কমাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়ে থাকে। পরিমিত মাত্রার থাইরঙ্নি শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। থাইরঙ্নি স্বাস্থ্য রক্ষায়, রোগ প্রতিরোধে, বুদ্ধিমত্তা বিকাশে, হৃদরোগ প্রতিরোধে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে এবং সর্বোপরি শারীরিক সব ধরনের বিপাকীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। হাইপারথাইরয়েডিজমে অতিমাত্রায় থাইরক্সিনের প্রভাবে ব্যক্তির কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, ফলশ্রুতিতে নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়, অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, নিন্দা কমে যায়, বুক ধড়ফড়সহ শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, হঠাৎ ভীতির সঞ্চার হওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব করা, হাত-পায়ে কাঁপুনি হওয়া পরিলক্ষিত হয়।
রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা নির্ণয় করে, থাইরয়েড গ্রন্থির আলট্রাসনোগ্রাফি, রক্তে ঊঝজ. ঈজচ. ও ঈইঈ. ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। হৃৎপিণ্ডে আক্রান্ত হলে জটিল অবস্থা ধারণ করে। এক্ষেত্রে সুচিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে।
লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ঢাকা মেডিকেল
কলেজ, ফোন : ০১৯৭০৮৮৭৭৬৬