একেবারে দুয়ারে এসে ঠেকেছে বিশ্বকাপ। আর মাত্র ২৭ দিন পরই ফুটবলে দুনিয়া কাঁপানো এ আসর শুরু হয়ে যাবে। ভেন্যু প্রস্তুতি নিয়ে ফিফা দুশ্চিন্তায় থাকলেও আয়োজক ব্রাজিল দেরিতে হলেও সব সম্পন্ন করে রেখেছে। ১২ জুন বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে। ১৩ জুলাই ফাইনালে বিদায় নেবে দুনিয়া কাঁপানো এ আসর। কে জিতবে এবারের বিশ্বকাপ এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ বা তর্ক-বিতর্ক অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। শুধু কি তাই, কে হবেন সেরা খেলোয়াড় তা নিয়েও ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে জোর বিতর্ক চলছে। চ্যাম্পিয়ন বা সেরা খেলোয়াড় কে হবেন তা বলা মুশকিল। তবে এবার বিশ্বকাপে দর্শকদের চোখ পড়ে থাকবে মূলত দুই তারকার দিকে। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের নেইমার। এ দুই তারকাকে নিয়ে ভক্তদের অনেক আশা ভরসা। প্রতি বিশ্বকাপের মতো এবারও আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল ফেবারিট। আর্জেন্টিনার দুই ও ব্রাজিলের পাঁচবার বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফিকশ্চার যেভাবে তৈরি হয়েছে তাতে এবার বিশ্বকাপে ফাইনাল ছাড়া দুই দলের মোকাবিলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল যদি সত্যিকারে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে তাহলে গোটা পৃথিবী জুড়ে অন্যরকম উত্তেজনা দেখা দেবে। খেলা মাঠে গড়ানোর অগে দুই দলের সমর্থকরা মাথা ঠিক রাখতে পারবে কিনা তা দেখার বিষয়। অন্যদের কথা বাদই দিলাম। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেললে বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে। ফুটবল বলতেইতো বাংলাদেশে দুই দেশের সমর্থনকে বোঝায়। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেললে তখন কি উত্তেজনা ধরে রাখা যাবে। হয়তো ম্যাচকে ঘিরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
বিশ্বকাপে দুই দেশ শেষবার মোকাবিলা করেছিল ১৯৯০ সালে। সেবার ক্যানিজিয়ার গোলে জয় পেয়ে ব্রাজিলকে বিদায় জানিয়েছিল ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। এবার দুই দেশের বিশ্বজয় করাটা দুই কারণে জরুরি হয়ে পড়েছে। ব্রাজিল পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতলেও নিজ দেশে স্বপ্নের ট্রফি কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। এর আগে ১৯৫০ সালে ব্রাজিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আয়োজন করলেও দুর্দান্ত দল থাকা সত্ত্বেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এবার অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থায় বিশ্বকাপ আয়োজন করে এমনিতেই ব্রাজিল সরকার চাপের মধ্যে আছে। অন্যদিকে আবার পুরো দেশের প্রত্যাশা রয়েছে এবার ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতে দীর্ঘদিনের লালিত থাকা স্বপ্ন পূরণ হবে। আর এ স্বপ্নের নায়ক হিসেবে ব্রাজিলবাসী নেইমারকে চিহ্নিত করছেন। এ তরুণ তারকাকে ঘিরে ব্রাজিলবাসীর অনেক আশা। একেতো নিজ দেশে খেলা তারপর আবার তাকে ঘিরে অতিরিক্ত প্রত্যাশার কারণে নেইমার এখনি মানসিক চাপে রয়েছে। ব্রাজিল স্কোয়াড ঘোষণার পর স্পেনের এক পত্রিকায় নেইমার সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি প্রায় স্বপ্ন দেখছি ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন না হওয়াতে দেশবাসী আমাকে ধিক্কার দিচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তিনি যে কতটা মানসিক চাপে রয়েছেন এ সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোচ স্কলারিও বুঝতে পারছেন বিষয়টি। তাই তিনি বলছেন, ফুটবল এগার জনের খেলা। এখানে এক জনের ওপর বেশি আশা করা মানে তার স্বাভাবিক খেলাটা নষ্ট করে দেওয়া। এ বিষয়টি ব্রাজিলবাসী উপলব্ধি করতে পারলে দলেরই উপকার হবে।
এতো গেল নেইমার বা ব্রাজিলের কথা। মেসির চাপতো আরও বেশি। পুরো বিশ্বই তাকে ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা করছেন। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের আশা ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনা যে জাদুঘর নৈপূণ্য দেখিয়ে বিশ্বকাপ জয় করেছিলেন। তার চেয়ে আরও গতিময় খেলা দিয়ে মেসির নেতৃত্বেই ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে হারানো শিরোপা ফিরে পাবে। কোচ ম্যাবেলা বার বার বলছেন, আর্জেন্টিনা দলে আরও নির্ভরযোগ্য তারকা রয়েছে শুধু মেসির ওপর ভরসা করলে ভুল হবে। অনেক দিন ধরে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতছে না। তাই এবার শিরোপা জেতাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। মেসিও জানপ্রাণ দিয়ে দেশের সাফল্য এনে দিতে চান। তাই বলে শুধু তার ওপর ভরসা করলেতো মানসিক চাপে মাঠে ঠিকমতো খেলতেই পারবেন না। মেসি যে কতটা চাপে আছেন তা বোঝা যায় তার কথাতেই। তিনি বলেছেন, ম্যারাডোনা-ম্যারাডোনাই। ওর সঙ্গে আমার তুলনা মানায় না। যাক ভক্তরা যদি এতেও খুশি হয় তাহলে তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে বিশ্বকাপ জেতার পর ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা করতে। আর্জেন্টিনার সাবেক এক জনপ্রিয় ফুটবলার বলেছেন, মেসি অবশ্যই উঁচুমানের খেলোয়াড়। কিন্তু অযথা বাড়াবাড়ি না করে তাকে যেন চাপে ফেলা না হয়। আমার বিশ্বাস এবার বিশ্বকাপে মেসি ভালো খেলবে। কিন্তু অতিরিক্ত আশা করা মানে মাঠে ওকে চাপে ফেলে দেওয়া। ভক্তদের বুঝতে হবে বিশ্বকাপে খেলোয়াড়রা এমনিতেই স্নায়ু চাপে ভোগেন। এখন আলাদাভাবে কারোর প্রতি অতিরিক্ত প্রত্যাশা করলে মাঠেতো সে ঠিকমতো খেলতেই পারবে না।