রিয়াল মাদ্রিদের একক আধিপত্য গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৯৬২ সালে ইউরোপসেরা হয়েছিল বেনফিকা। পর্তুগালের দলটিকে আকাশচুম্বী সাফল্য এনে দেওয়ার পরও ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় কোচ বেলা গাটম্যান পদত্যাগ করেন। সঙ্গে অভিশাপ দিয়ে যান '১০০ বছরে ইউরোপের কোনো শিরোপা জিততে পারবে না বেনফিকা'। সে অভিশাপ থেকে এখনো মুক্ত হতে পারেনি পর্তুগিজ ক্লাবটি। ১৯৬২ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগ মিলে মোট আটবার ফাইনাল খেলেছে বেনফিকা, কিন্তু শিরোপা জিততে পারেনি একবারও। ফাইনালে তারা ফেবারিট হিসেবে শুরু করে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে যায়। ইউরোপা লিগের ফাইনালে আরও একবার দুর্ভাগ্যের শিকার হলো বেনফিকা। পুরো ম্যাচে দাপটের সঙ্গে খেলেও টাইব্রেকারে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার কাছে হেরে গেল। লিগে গত বছর ফাইনালে তারা হেরেছিল ইংলিশ ক্লাব চেলসির কাছে।
ইতালির তুরিনে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল নাটকীয়তায় পূর্ণ। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেই খেলেছে বেনফিকা। কিন্তু স্ট্রাইকাররা একাধিক গোল মিস করায় নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ গোলশূন্য ড্র ছিল। অতিরিক্ত সময়েও তাই। কিন্তু টাইব্রেকারে ওস্কার কারডোজো এবং রডরিগো পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হলে সেভিয়ার জয় নিশ্চিত হয়। ২০০৭ সালের পর আবারও ইউরোপা লিগ ঘরে তুলল স্প্যানিশ দলটি। ২০০৬ সালেও আরেকবার ইউরোপার শিরোপা ঘরে তুলেছি তারা।
এদিকে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পারায় হতাশ বেনফিকার কোচ জর্জ জেসাস বলেছেন, 'এটা সত্যি দারুণ একটা ম্যাচ ছিল। ফাইনাল তো এমনই হওয়া উচিত। দুই দলের সামনেই শিরোপা জয়ের সুযোগ ছিল। তবে শুরুতে সেভিয়া অনেক ভালো খেলেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা ম্যাচের রাশ টেনে ধরেছিলাম। আমরা যে অনেক ভালো দল তা ভালো খেলেই প্রমাণ করেছি। আমরা আমাদের শক্তি দেখিয়েছি এবং অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছি। তবে শেষ পর্যন্ত গোল আদায় করতে পারিনি। আর পেনাল্টি তো ভাগ্য। ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল না।' তবে সেভিয়ার কোচ ইউনাই ইমেরিও তার দলকেই সেরা বলেছেন, 'এ জয় সেভিয়ার প্রাপ্য ছিল। বেনফিকা অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে এটা ঠিক, কিন্তু ম্যাচে আমরাই ভালো খেলেছি। তাদের আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা একটি দল হিসেবে খেলে সফল হয়েছি। শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারায় খুবই ভালো লাগছে।'
টাইব্রেকারে বেনফিকার স্ট্রাইকার লিমা প্রথম শটে পর্তুগিজ জায়ান্টদের এগিয়ে দেন। কিন্তু এর পর পরই সেভিয়া স্ট্রাইকার কার্লোস বাকা জোরাল শটে সমতা ফেরান। পরের শটে সেভিয়া গোলরক্ষক বেটো ডাইভ দিয়ে ওস্কার কারডোজোর শট আটকে দেন। বেনফিকা গোলরক্ষক জ্যান ওবলাককে উল্টোদিকে পাঠিয়ে স্টিফেন এমবিয়া ব্যবধান ২-১-এ নিয়ে যান। এরপর যখন বেটো রডরিগোর শট আটকে দেন তখন সেভিয়া শিরোপার কাছে চলে যায়। এরপর কোক ও বেনফিকা অধিনায়ক লুইসানো পর পর দুটি গোল করার পরে ম্যাচের শেষের দিকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামা ফ্রেঞ্চম্যান কেভিন গামেইরো গোল করে ৪-২ গোলে এগিয়ে থেকে দলের শিরোপা নিশ্চিত করেন।