১৯৫৮ সালে সুইডেন দুটি 'মহামূল্যবান' জিনিস উপহার দিয়েছিল বিশ্বকে। ব্রাজিল এবং পেলে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিশ্বকাপ খেলতে নেমে ফুটবলপ্রেমীদের মোহবিষ্ট করেছিলেন পেলে। দু পায়ের শৈল্পিক ফুটবলে মন জয় করেছিলেন বিশ্বের। তরুণ এক ফুটবলারের নান্দনিকতায় ভর করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। এখন পর্যন্ত ব্রাজিলই প্রথম ও একমাত্র দল হিসেবে ইউরোপে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে। ল্যাটিন আমেরিকার আর কোনো দল মহাদেশীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে শিরোপা জিততে পারেনি ইউরোপে। ব্রাজিল ইতিহাস গড়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত কোনো ইউরোপীয় দেশ আমেরিকায় শিরোপা জিততে পারেনি। এবার কি পারবে কোনো ইউরোপীয় দেশ অতীত রেকর্ড ভাঙতে? এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত।
'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' বিশ্বকাপ ফুটবলের বিশতম আসর শুরু হতে বাকি মাত্র ১৫দিন। এই আসরকে ঘিরেই পুরো বিশ্ব মেতে উঠে উৎসবে। বাধা পড়ে এক সুতোয়। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের ৩২টি সেরা দল। ১৩টি ইউরোপের। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনও ইউরোপীয় কনফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত। ব্রাজিলে বসছে আসর। অথচ অন্যতম ফেবারিট স্পেন। স্পেন ছাড়াও শিরোপা দৌড়ের রেসে রয়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি, 'সুপার পাওয়ার' জার্মানি, 'টোটাল ফুটবল'র জনক নেদারল্যাণ্ডস এবং ইংল্যান্ড। ফেবারিটের তালিকায় ইউরোপীয়ান দলগুলোর শক্ত অবস্থান থাকলেও অতীত বিবেচনায় ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, এবারও বিশ্বকাপ ট্রফি জেতা কষ্টকরই হবে ইউরোপীয় দেশগুলোর।
বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু ১৯৩০ সালে, উরুগুয়েতে। অভিষেক আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক দল। চার বছর পর আসর বসে ইতালিতে। চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক ইতালি। ১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে ইতালি। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য বিশ্বকাপ বন্ধ থাকে ১২ বছর। একযুগ পর ১৯৫০ সালে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরটির আয়োজক হয় ব্রাজিল। চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। পরের আসর ১৯৫৪ সালে বসে চির শান্তির দেশ সুইজারল্যান্ডে। ফেবারিট হয়ে ফাইনালে হাঙ্গেরি হেরে যায় জার্মানির কাছে। ১৯৫৮ সালের সুইডেন বিশ্বকাপের আবেদন একেবারেই ভিন্ন। এই আসর উপহার দেয় ব্রাজিল ও পেলেকে। অসাধারণ ফুটবল খেলে বিশ্বজয়ের ইঙ্গিত রাখেন পেলে। আটলান্টিকের পাড়ে শিরোপা জেতা প্রথম দল ব্রাজিল। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশটি ইউরোপের বাইরে ২০০২ সালে এশিয়াতেও শিরোপা জিতেছে। ল্যাটিন আমেরিকায় শিরোপা জেতার রেকর্ড হয়তো নেই ইউরোপীয় দেশগুলোর। তবে ইউরোপের বাইরে বিশ্বসেরা হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। সেটা সর্বশেষ আসরে। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। এবারও 'টিকিটাকা' ফুটবলের জনক স্পেনিশদের শিরোপা জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউরোপের বাইরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়া সাতবার আসর বসেছে আমেরিকা মহাদেশে। এরমধ্যে ল্যাটিন আমেরিকায় ছয় এবং উত্তর আমেরিকায় একবার। ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসেছিল ১৫ নম্বর আসর।
সেবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। ফাইনালে টাইব্রেকারে হারিয়েছিল ইতালিকে। আমেরিকা মহাদেশের যে সাতবার আসর বসেছে, ইউরোপীয় দলগুলো ফাইনাল খেলেছে মাত্র তিনবার। প্রথম ইউরোপীয় দল হিসেবে চেকোস্লাভাকিয়া ফাইনাল খেলে ১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপে। ব্রাজিল হারায় ৩-১ গোলে। দ্বিতীয় ইউরোপীয় দেশ ইতালি ফাইনাল খেলে ১৯৭০ সালে।
এবারও চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। ৪-১ গোলে হারায় ইতালিকে। মেঙ্েিকার ওই আসরে দুই দল ফাইনাল খেলেছিল দুই দুটি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়ে চিরতরে নিজেদের করে নেয় জুলেরিমে ট্রফি। ১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। হারায় ইউরোপীয় দল নেদারল্যান্ডসকে। ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাজিল হারায় ইতালিকে।
পরিসংখ্যানের হিসাবে ইউরোপীয় দেশগুলোর রেকর্ড ভালো নয় আমেরিকায়। এবার অষ্টমবারের প্রচেষ্টায় কি অতীত ইতিহাসকে মাটি চাপা দিতে পারবে স্পেন কিংবা জার্মানি? না, ল্যাটিনদেরই জয়জয়কার থাকবে বিশ্বকাপে। এজন্য তাকিয়ে থাকতে হবে রিও ডি জেনিরোর দিকে।