এক যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান লিগ শিরোপা পাচ্ছে না। অথচ তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী পেশাদার লিগ শুরুর পর চারবার ট্রফি জেতার কৃতিত্ব পেয়েছে। তারপরও সমর্থকদের তৃপ্তি মিটছে না, তারা চায় প্রিয়দলের আরও সাফল্য। দল জিতলে তারা যেমন উল্লাসে মেতে উঠেন তেমিন হারলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এটা শুধু আবাহনীর ক্ষেত্রে নয় মোহামেডানের বেলায় একই দৃশ্য দেখা যায়। এবার কিন্তু আবাহনী দল হিসেবে তেমন শক্তিশালী নয়। তবু লিগে শিরোপা জেতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল। প্রথমপর্বে শীর্ষে থাকা শেখ জামালের চেয়ে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল খুবই কম। সমর্থকদের আশা ছিল দ্বিতীয় পর্বে প্রিয়দল উজ্জীবিত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান নেবে। না, এ পর্বে আবাহনী একেবারে ছন্দহীন হয়ে পড়েছে। কোনো ম্যাচে আবাহনীকে আবাহনী রূপে দেখা যাচ্ছে না। ব্রাদার্স, মোহামেডানের কাছে হার ছাড়াও ১০ জনের শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের বিপক্ষে আবাহনী জয়ের বদলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। সোমবার দুর্বল চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গেও ড্র করে মাঠ ছেড়েছে দেশপ্রিয় দলটি। ১৮ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করাতে যে সংকটাপন্ন অবস্থা তাতে শিরোপা নয় আবাহনীর রানার্সআপ হতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা জেগে উঠেছে। দলের এ পারফরম্যান্সে সমর্থকরা এত ক্ষুব্ধ যে প্রতিম্যাচ শেষেই তারা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম আঙ্গিনায় বিক্ষোভ করছে। বিশেষ করে আবাহনী সমর্থক দলকে যারা নেতৃত্ব দেন তারা ম্যানেজারের পদ থেকে সত্যজিত দাশ রুপুর অপসারণ দাবি করেছেন।
এ নিয়ে আলাপ হচ্ছিল সত্যজিত দাশ রুপুর সঙ্গে। তিনি বললেন, অবশ্যই লিগে দলের অবস্থান ভালো নয়। বলতে পারেন শিরোপার আশা ক্ষীণ হয়ে গেছে। কারণ তৃতীয়পর্বে আবাহনীকে শুধু সব ম্যাচ জিতলেই চলবে না। শীর্ষে থাকা শেখ জামালকে কম করে হলেও ১০ বা ১২ পয়েন্ট হারাতে হবে। এটা অনেকটা অসম্ভবই বলা যায়। তাহলে আবাহনী এবার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে না ধরেই নিয়েছেন। রুপু বলেন, আমি তা বলছি না বাস্তবটাই তুলে ধরছি। সত্যি বলতে কি দ্বিতীয় পর্বে দল এমনভাবে পয়েন্ট হারাবে তা ম্যানেজার হিসাবে আমিও ভাবতে পারেনি। কেন এমন হচ্ছে? আসলে এর পেছনে একটাই কারণ- আমাদের খেলোয়াড়রা সহজ সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারছে না। ব্রাদার্স ও মোহামেডানের কাছে আমরা যে দুটি ম্যাচ হারলাম। তাতে আপনিই বলুন সেদিন আমরা হারার মতো খেলেছি কিনা? বার বার গোলের সুযোগ এসেছে তারপরও জালে বল পাঠানো যায়নি। শেষ তিন ম্যাচে ড্র করলাম সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তিন ম্যাচেই জেতা সম্ভব ছিল। তাহলে কি খেলোয়াড়রা ব্যর্থ? সরাসরি ব্যর্থ বলাটা ঠিক হবে না। কিন্তু এ প্রতিম্যাচেই সহজ সুযোগ পেয়ে কেন কাজে লাগাতে পারল না সেটাই আমার আফসোস। চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ড্র'র পর কোচ পৌর মুসলিমিতো ম্যানেজমেন্টের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রুপু বলেন, জানি না কোচ ক্ষুব্ধ কিনা। তবে এতটুকু বলতে পারি ম্যানেজমেন্টের কোনো গাফলতি নেই। তাহলেতো খেলোয়াড়রা নীরব থাকতেন না। নিশ্চয় যেকোনোভাবে তাদের অভিযোগ মিডিয়াকে জানাত। অনেকে পেমেন্টের কথা বলেন, আসলে আবাহনী এমন একটা দল যারা কখনো খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে নয়-ছয় করে না। আসলে ভাগ্য আমাদের পেছনে ফেলছে। সমর্থকরা এ নিয়েতো ভীষণ ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে ম্যানেজারের পদ থেকে আপনার অপসারণ চেয়েছেন? রুপু বলেন দল খারাপ করলে সমর্থকরা ব্যথিত হবেন। কিন্তু এবার মুখ চেনা গুটি কয়েক সমর্থকদের কর্মকাণ্ড দেখে আমিও ব্যথিত। সমর্থকদের কাজ হচ্ছে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়া। লক্ষ্য করলে দেখবেন এবার মাঠে কেউ আহত বা হলুদ কার্ড দেখালে গুটিকয়েক সমর্থকদের উল্লাস করতে। তারা মনে হয় জয় নয় আবাহনী হারে সেই আশা নিয়েই গ্যালারিতে আছে। তানা হলে এমন কর্মকাণ্ড করবে কেন? আর আমার অপসারণ চাইছে, তারা কি ধরেই নিয়েছেন ম্যানেজারের পদটা আমার জন্য স্থায়ী। আজ আমি আছি সামনে আরেকজন ম্যানেজার হবেন। এটাই ক্লাবের নিয়ম। কারোর কথায় ক্লাব কাউকে অপসারণ করবে না। তাছাড়া বুঝতে পারছি না দল জিততে না পারলে ম্যানেজার কি করবে। আমিতো আর মাঠে নেমে খেলতে পারব না। যাক এ নিয়ে আমি মোটেই বিচলিত নই। আবাহনীতে দেশ-বিদেশ জুড়ে কোটি কোটি সমর্থক। সুতরাং গুটিকয়েক ব্যক্তি কি বলল তা আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। আর যারা এসব করছেন বর্তমানে তাদের ক্লাবে অবস্থান কি তা নিয়েও মুখ খুলতে চাই না।