চার বছরে অনেক পাল্টে গেছে ভারত। ৮৩-তে বিশ্বকাপ জয় করলেও ৮৭-র দলটি ছিল সেরা। অধিনায়ক সেই কপিল দেবই। তবে দলটা অনেক ভারসাম্যপূর্ণ। ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আয়োজক ভারত ও পাকিস্তান। তাই ক্রিকেটবোদ্ধারা টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই যেন স্বাগতিক ভারতকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দিল! কিন্তু প্রথম দৃশ্যটা চিত্রনাট্য অনুসরণ করে মঞ্চায়িত হলেও শেষ দৃশ্যটা নিজের মতো করে রাঙিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব মাৎ করে দিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন অ্যালান বোর্ডার। আর যে ভারতকে নিয়ে এতো তর্জন-গর্জন সে দলটি ঘরের মাঠে সেমিফাইনালের বাধাই পেরুতে পারল না।
৮৭-র বিশ্বকাপেই যেন একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত হলো, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি বিশ্বকাপে দরকার হয় ভাগ্যের সহায়তাও। দুই সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের দিকে তাকালে ভাগ্যের উপস্থিতি পরিষ্কার হয়ে যায়! সবার ধারণা ছিল ফাইনাল হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। স্বাগতিক দুই দলই গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষকে ছিন্ন-ভিন্ন করে সেমিতে পা রেখেছে। কিন্তু প্রথম সেমিতেই ঘরের মাঠ লাহরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ইমরান খানের প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তান ১৮ রানে হেরে বসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। আর দ্বিতীয় সেমিতে বোম্বাইয়ের (বর্তমান মুম্বাই) ওয়াংখেড়েতে ইংলিশদের কাছে হেরে যায় ভারত। এশিয়ার দুই পরাশক্তির বিদায়। ফাইনালে দুর্ভাগ্যের শিকার হয় সেমিতে চমক দেখানো ইংল্যান্ড। শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ৭ রানে হেরে যায়।
সৌভাগ্যের ছোঁয়া থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়কে ছোট করে দেখার উপায় নেই! যোগ্য দল হিসেবেই বোর্ডাররা শিরোপা জিতেছিল। বিজয়টা ছিল প্রকৃত অর্থে তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। ৮৩-তে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ানরা টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নতুনভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। চার বছর যেন ক্রিকেটারদের ধ্যানজ্ঞান ছিল এক বিশ্বকাপই। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে তাই পুরস্কারটাও হাতেনাতেই পায় অস্ট্রেলিয়া।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অসিরা যে বিশ্বকাপ জিতবে, তার ইঙ্গিত পেয়েছিল বোধহয় প্রথম ম্যাচেই। বিশ্বজয়ী ভারতকে তারা হতাশ করে দিয়ে ওই ম্যাচ জিতেছিল মাত্র এক রানে। যদিও গ্রুপে পরের ম্যাচে তারা ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি। তাতে কি? গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে সেমিতে উঠেই চমক দেখাল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতে। আর শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ইংলিশদের কপালে পরাজয়ের তিলক এঁকে দিয়ে তো ইতিহাসের অংশ হয়ে যান বোর্ডাররা।
৮৭-তে অস্ট্রেলিয়া দলটি ছিল দুরন্ত ক্রিকেটারে ভরপুর। তাই বিশ্বকাপে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই সেরা দল ছিল অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্টের আট ম্যাচে ব্যাট করে ডেভিড বুন ৪৪৭ রান করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রাহক হয়েছিলেন, আর জিওফ মার্শ ৪২৮ রান হয়েছিলেন তৃতীয় (সর্বোচ্চ ৪৭১ রান ছিল ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচের), আর বোলিংয়ে ১৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ শিকারি বোলার হয়েছিলেন অসি পেসার ক্রেইগ ম্যাকডারমট। তবে ভারতীয় বোলার চেতন শর্মা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে অনন্য এক কীর্তি গড়েন। ওয়ানডের ইতিহাসে তৃতীয় হলেও বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক। ১৯৮২ ওয়ানডের প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেন পাকিস্তানি বোলার জালাল-উদ-দীন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে। সিডনিতে ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রুস রেড, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
ভারত-পাকিস্তান বিশ্বকাপে আইসিসি ফরম্যাটে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। আকর্ষণীয় করার জন্য ৬০ ওভারের ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে করা হয় ৫০ ওভার। এই বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণ করে আগের আসরের আট দলই। আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্য সাত দেশ, আর ১৯৮৬ সালে আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন জিম্বাবুয়ে।
এক নজরে
চ্যাম্পিয়ন : অস্ট্রেলিয়া
রানার্সআপ : ইংল্যান্ড
আয়োজক : ভারত-পাকিস্তান
সর্বোচ্চ রান : গ্রাহাম গুচ (ইংল্যান্ড)-৪৭১
সর্বোচ্চ উইকেট : ক্রেইগ ম্যাকডারমট (অস্ট্রেলিয়া)-১৮
মোট দল : ৮টি
মোট ম্যাচ : ২৭টি