কাল যখন অনুশীলনে আসেন রুবেল হোসেন, তখন স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা গুটিকয়েক দর্শক হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। বিনিময়ে হাত নাড়ান রুবেল। রুবেলকে স্বাগত জানান মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিমরাও এবং মিডিয়ার কাছ থেকে আগলেও রাখেন। কাল শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রস্তুতি। প্রথম দিনের অনুশীলনে বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন রুবেলসহ সব ক্রিকেটাররা। অনুশীলন শুরু হলেও শুধু ছিলেন না সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। দুজনেই এখন অস্ট্রেলিয়ায়। সাকিব খেলছেন বিগ ব্যাশ এবং তামিম হাঁটুর অস্ত্রোপচার শেষে রিহ্যাব করছেন মেলবোর্নে। ২৬ জানুয়ারি দুজনেই যোগ দিবেন ব্রিসবেন ক্যাম্পে।
এবার নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ। দলের নেতা মাশরাফি। যদিও দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি বিশ্বকাপ খেলছেন ২০০৩ সাল থেকে। ইনজুরির জন্য ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেননি। না হলে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টানা চারটি বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড গড়তেন। এবারই প্রথম নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বকাপে। মাশরাফি ছাড়াও তিন বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় সাকিব, তামিম ও মুশফিক। দুটি করে বিশ্বকাপ খেলবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল। ৯ ক্রিকেটার নাসির হোসেন, এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক সৌরভ, সাবি্বর রহমান রুম্মন, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও আরাফাত সানি প্রথমবারের মতো খেলতে নামবেন ক্রিকেট মহাযজ্ঞে। কাল অনুশীলনের প্রথম দিন ব্যাট ও বল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন না মাশরাফিরা। ব্যস্ত সময় পার করেন একাডেমি ভবনে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে। এরপর জিম করে ঘাম ঝড়ান।
জাতীয় দলের ব্যাগী গ্রিন ক্যাপ পরে এর আগেও অনুশীলন করেছেন তাইজুল. আরাফাতরা। কিন্তু কালকের অনুশীলন নিঃসন্দেহে অন্য সবগুলোর চেয়ে এগিয়ে। বিশ্বকাপ খেলবেন-এমন স্বপ্ন সব ক্রিকেটারই দেখে থাকেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় কয়জনের? বাংলাদেশের গুটিকয়েক ভাগ্যবান ক্রিকেটারের অন্যতম এই দুই বাঁ হাতি স্পিনার। দুজনেই প্রথমবার খেলবেন ক্রিকেট মহাযজ্ঞে। দুজনে সতীর্থ হলেও আড়ালে আবার একে অপরের প্রতিপক্ষও। বিশ্বকাপ একাদশে যদি দুই বাঁ হাতি স্পিনার খেলেন, তাহলে সাকিব অটোমেটিক চয়েজ। বাকি একজনের জন্য লড়াই করবেন তাইজুল ও আরাফাত। ভালো করেই জানেন দুই স্পিনার। কে খেলবেন, কে খেলবেন না, এ বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে সেরাটা খেলতে চান দুজনেই। সুযোগ পেলেই ভালোটা খেলতে চান আরাফাত, 'অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন আলাদা। সেখানে কে খেলবেন, কে খেলবেন না, এটা টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয়। আমি সুযোগ পেলে চেষ্টা করব কাজে লাগাতে।' একই সুর তাইজুলেরও, 'আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ভাবছি না। আমি চাইছি খেলতে। যদি খেলতে নামি, তাহলে অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা থাকবে।' ভালো খেলার বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী অভিষেক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করে রেকর্ডবুকে জায়গা করে নেওয়া তাইজুল, 'আমি এক ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি-এমনটা ভাবছি না। আমি ভাবছি কীভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে ভালো বোলিং করা যায়। সত্যি বলতে কি আমি চাইছি দেশের জন্য কিছু করতে। এছাড়া ব্যক্তিগত একটা টার্গেটও রয়েছে। সেরা ১০ জন বোলারের মধ্যে থাকতে চাই।'
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে কোনো মিল নেই উপমহাদেশের। সেখানে সব সময়ই সহায়তা পেয়ে আসছেন পেসাররা। গতি ও বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কঠিন লড়াই করতে হয় ব্যাটসম্যানদের। উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরও বেশি লড়তে হয় স্পিনারদের। সেখানে বাংলাদেশ স্কোয়াডে রয়েছেন তিন বাঁ হাতি স্পিনার। একমাত্র সাকিবেরই রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় খেলার অভিজ্ঞতা। অবশ্য নিউজিল্যান্ডে খেলেছেন অনেকেই। সিনিয়র ক্রিকেটারদের থেকে টিপস নিবেন মানিয়ে নেওয়ার জন্য বলেন তাইজুল, 'সাকিব, মাশরাফিসহ অন্য সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে সহায়তা নিব। তারা যথেষ্ট সাহায্য করছেন। এছাড়া বিগ ব্যাশ, ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ দেখেছি। আমার মনে হয় এটা আমাদের সুবিধা দিবে।' আরাফাত বলেন, 'সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকেতো সহায়তা নিবই। কোচ হাতুরাসিংহে অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন। আমাদের কন্ডিশনে বল নিচু হয়। ওখানে বাউন্সটা বেশি। আমি মনে করি সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারলে ভালো করা অসম্ভব কিছু নয়।'
কাল শুরু হয়েছে অনুশীলন। চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। আজ থেকে বৃহস্পতিবার দুই বেলা করে স্কিল অনুশীলন করবেন মাশরাফিরা। শুক্রবার স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং। শনিবার বন্ধ। ১৮, ১৯ জানুয়ারি দুই বেলা, ২০ জানুয়ারি এক বেলা, ২১ ও ২২ জানুয়ারি দুই বেলা অনুশীলন। ২৪ জানুয়ারি ব্রিসবেনের উদ্দেশ্যে রাত ৯ টায় ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেখানে দুই সপ্তাহের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবে মাশরাফি বাহিনী।