কথা বলে ফিরে গিয়েছিলেন হোটেলে। রুবেল হোসেনের ফিরে যাওয়ার পর সবাই যখন ভাবছিলেন, যাক আম্পায়ার নিয়ে একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন রুবেল এবং লেখার জন্য রসদও পাওয়া গেল! এ যখন অবস্থা, তখন হঠাৎ করে ঝড়ের বেগে ল্যাংহাম হোটেলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন রুবেল। উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, যাতে আম্পায়ার নিয়ে কোনো কিছু না লেখা হয়। এতে সমস্যা হবে বিশ্বকাপের এবারের আসরের বাংলাদেশের সেরা বোলারের। না লেখার অনুরোধ করলেও তার বক্তব্য কিন্তু স্পষ্ট করে দিয়েছে পুরো দলের মনোভাব কী? দুই আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ডের বিতর্কিত, নির্লজ্জ আম্পায়ারিংয়ে কতটা ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
একটি নয়, তিন-তিনটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে দিয়েছেন দুই আম্পায়ার। তিনটিই যাচ্ছেতাই। তিনটি সিদ্ধান্তই ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথমটি সুরেশ রায়নার বিপক্ষে মাশরাফি বিন মর্তুজার লেগ বিফোরের আবেদন। আম্পায়ার গোল্ড নাকচ করে দিলে রিভিউর আবেদন করেন মাশরাফি। কিন্তু সাড়া দেননি তৃতীয় আম্পায়ার। অথচ টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে, রায়নার প্যাডে লাগা বলটি আঘাত করত অফ স্ট্যাম্পে। সেই রায়না করেন ৬৫ রান। সবচেয়ে বেশি পুড়িয়েছে রোহিত শর্মার আউট না দেওয়াটা। দলীয় ৩৯.৪ ওভারে রুবেলের বলে লাইনে রোহিত তালুবন্দী হন ইমরুল কায়েসের। রোহিতের স্কোর তখন ৯০। রোহিতকে ফিরিয়ে যখন আনন্দ করছে টাইগাররা, তখনই 'নো' কল করেন আম্পায়ার গোল্ড। বিস্মিত সবাই। বিস্মিত রোহিতও। গোল্ড নো ডাকেন কোমর উচ্চতায় থাকায় বিমারের অজুহাতে। কিন্তু এবারও কোনো রিভিউ ডাকেননি আম্পায়ার। স্কোরবোর্ডে তখন জ্বলজ্বল করছে ৩ উইকেটে ১৯৬। ওই যাত্রায় বাঁচার পর রোহিত আরও ৪৭ রান যোগ করেন। এতে করে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৩০২ রান। যা টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। আউটটি না দেওয়ায় হতাশ রুবেল, 'রোহিত ওই সময় আউট হলে ম্যাচের চিত্র অন্য রকম হতো। ৩০০ রান চেজ করে জেতা কঠিন। রানটি একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল।' এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলার রুবেল। ৬ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৮টি। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে এক উইকেট নেন। কিন্তু ম্যাচসেরা বোলিং করেন অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে রিভার্স সুইং করান। যাতে ৪৯ ওভারে স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে নিয়ে যান প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে। ওই ম্যাচে রিভার্স সুইং পেয়েছিলেন বলেন রুবেল, 'আমার জীবনের অন্যতম সেরা বোলিং স্পেল ওটা। আবহাওয়ার জন্য আমি রিভার্স সুইং পাচ্ছিলাম। সেটাকে কাজে লাগিয়ে বোলিং করেছি।' বিশ্বকাপে আসার আগে বড় রকমের ধাক্কা সামলে আসেন। তিন দিন হাজতবাসও করেন। তারপরও অদম্য মানসিকতার জন্য নিজেকে মেলে ধরেন বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে উইকেট নেন ৮টি। নিয়মিত ১৪৫-১৪৭ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে জন্ম দিয়েছেন বিস্ময়ের। এই ধারাবাহিকতার জন্য শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিককে, 'স্ট্রিক আমাকে নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তার কারণেই আমার এমন ভালো বোলিং হয়েছে।'
এবারের আসরের বাংলাদেশ একটি বিস্ময়ের নাম। বিস্ময়ের নাম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিস্মিত করেছে বাংলাদেশের পেস বিভাগ। মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল ও তাসকিন আহমেদ নিয়মিত ১৪০-১৪৭ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছেন। যা ক্রিকেট বিশ্বে নতুনভাবে পরিচিত করেছে বাংলাদেশকে।