বিদায় মেলবোর্ন। বিদায় অস্ট্রেলিয়া। বিদায় বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে কাল মেলবোর্ন ছেড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সবাই একসঙ্গে ফিরলেও দলের সঙ্গে আসেননি সাকিব আল হাসান। সবাইকে ঘুমে রেখে স্ত্রী শিশিরকে নিয়ে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায় হোটেল ছেড়েছেন দলের এক নম্বর ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর। একদিন আগে সিডনি উড়ে গেছেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে।
যে দুর্দান্ত গতিতে শুরু হয়েছিল টাইগারদের ক্রিকেট মহাযজ্ঞ মিশন। শেষ হয়েছে ততটাই তেতো স্বাদ নিয়ে। ক্যানবেরার মানুকায় আফগানিস্তানকে হারিয়ে স্বপ্নের শুরু ছিল মাশরাফিদের। 'হার্ট অব ক্রিকেট' মেলবোর্নে সেই স্বপ্নের কফিনে পেরেক ঠুকে দেন দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দার। পরিণত হন চির শত্রুতে। দুই আম্পায়ারের নগ্ন হস্তক্ষেপে ভারতের কাছে হেরে শেষ হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। আম্পায়ারদ্বয়ে আচরণে ক্ষুব্ধ ক্রিকেটাররা তারপরও মনে করেন, এটাই তাদের সেরা বিশ্বকাপ। সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিশ্বকাপ। ভবিষ্যতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিশ্বকাপ।
ইতিহাস, পরিসংখ্যান সবকিছুই ছিল ভারতের পক্ষে। তারপরও দুর্দান্ত খেলতে থাকা এবং ২০০৭, ২০১২ সালের আত্দবিশ্বাসে বলীয়ান টাইগাররা স্বপ্ন দেখছিলেন আরও একটি অঘটনের। ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী স্বপ্ন দেখছিলেন ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে সিডনিতে সেমিফাইনাল খেলার। কিন্তু হয়নি। হয়নি আবার স্বাভাবিক ধারায়। হয়নি বলেই কষ্ঠের নোনা জলে সিক্ত হয়েছেন মাশরাফিরা। কাল যখন হোটেল ছাড়ছিলেন, তখন ল্যাংহাম হোটেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলছিলেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু তাতে ছিল না প্রাণের স্পন্দন। নীরস ভঙ্গিতে, যেনতেন ভাবে ছবি তুলে দায় সেরেছেন ক্রিকেটাররা। ছবি তোলার পর যখন মাশরাফিকে কাছে পাওয়া গেল, দেখে মনে হলো ঝড় বয়ে গিয়েছে। কেমন কাটলো বিশ্বকাপ? অনেকটা সময় তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, 'খুব ভালো। খুব ভালো। আবার একইভাবে খুবই কষ্টকর।' সাত সাতটি অস্ক্রোপচার নিয়ে ক্রিকেট খেলছেন, যখনই কেউ জানছে, অবাক হচ্ছেন সবাই। আবার যখন কথা বলছেন মাশরাফির সঙ্গে, বিস্মিত হচ্ছেন তখন। কেউ ভাবতেই পারেন না, এমন শক্ত মানসিকতার মানুষ এই জমানায় আছে। হাতে গোনা যে কয়জন ব্যক্তি আছেন শক্ত মানসিকতার, তাদেরই একজন মাশরাফি। সেই মাশরাফির নেতৃত্বে 'টিম বাংলাদেশ'কে দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। যে দল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে একই গতিতে। প্রতিপক্ষকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায় খাদের কিনারায়। এমন একটি দলকে নেতৃত্ব দিতে পেরে তৃপ্ত টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি, 'আমি একটি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি, যাদের মধ্যে অধিনায়ক হওয়ার প্রতিযোগিতা নেই। ভালো করার তীব্র ক্ষুধা তাদের। এমন দলকে নেতৃত্ব দিতে পেয়ে ভীষন খুশি। অধিনায়ক হিসেবে, ক্রিকেটার হিসেবে আমি মনে করি এবারের বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য অনেক প্রেরণাদায়ক। অনেক কিছু শিখেছি। অনেক প্রাপ্তি এবারের আসর থেকে।'
ফাইনাল খেলতে পারেননি। না পারলেও টানা চার সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপকে নিজের করে নিয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা। পারফরম্যান্স কিংবা তারকাখ্যাতিতে সাঙ্গাকারার তুলনায় আসেন না মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাকে কি? এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা এবং আসরের অন্যতম সেরা তারকা। টানা দুই সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে নিজের করে নিয়েছেন। দেশে যাওয়ার আগে বলেন, এটাই ক্যারিয়ারের স্বর্ণ সময়, 'বিশ্বকাপ শুরুর আগেও আমি ভাবিনি। কিন্তু বিশ্বকাপে নামার পর মনে হয়েছিল, আমি ভালো খেলব। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে রান করার পর মনে হয়েছিল সেঞ্চুরি করতে পারি। সেটা যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করে ফেললাম, তখন আমার বুক থেকে যেন হাজারমনী একটি পাথর নেমে পড়েছিল। পরের ম্যাচে সেই আত্দবিশ্বাস নিয়েই সেঞ্চুরি করলাম। আমার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি।' মাহমুদুল্লাহ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে টানা সেঞ্চুরিসহ রান করেছেন ৩৬৫।