কুমার সাঙ্গাকারা যখন প্রথম চন্ডিকা হাতুরাসিংহের নাম প্রস্তাব করেন বিসিবির এক পরিচালককে, তখন বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল ওই পরিচালকের। সাঙ্গাকারা অবশ্য বেশ জোরালো যুক্তি দিয়েছিলেন, কেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ করা উচিত হাতুরাসিংহকে। সাঙ্গাকারার প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে বিসিবি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দায়িত্ব তুলে দেন হাতুরাসিংহের হাতে। সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, পাকিস্তান সিরিজ এবং চলতি ভারতীয় সিরিজই তার প্রমাণ। শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত হাতুরার সোনার কাঠির কোচিংয়ে অল্প অল্প করে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। পাল্টে যাচ্ছে ক্রিকেটারদের মানসিকতাও।
প্রথম ওয়ানডে জিতে অনেক বেশি নির্ভার মাশরাফিরা। কাল বিশ্রামে শুইয়ে বইয়েই কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। অবশ্য সন্ধ্যায় সবাই পরিবার পরিজনের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ইফতার সারতে। একই অবস্থা ছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও। তারা বিশ্রাম করে কাটিয়েছেন হোটেলে। কাল ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘অধিনায়ক পরিবর্তন অনেক কঠিন একটি সিদ্ধান্ত ছিল।’ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে বাংলাদেশ দুই অধিনায়ক তত্ত্বে যাত্রা করে।
গত জুনে হাতুরাসিংহে দায়িত্ব নেন মাশরাফি, মুশফিকদের। প্রথম অফিশিয়াল অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখতে, বুঝতে, জুনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দেখেন পর্যবেক্ষক কোচ হিসেবে। অবশ্য তারই পরিকল্পনায় সিমিং উইকেট বানানো হয়েছিল ভারত বধের। তাসকিন আহমেদ, মাশরাফিরা সেই পথ তৈরি করে দিয়েছিলেনও। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হয়নি। তারপরও শিষ্যদের বেশ ভালোভাবে বুঝে নিয়েছিলেন হাতুরা। যদিও ক্যারিবীয় সফরে নাকাল হয়েছিলেন হোয়াইটওয়াশ হয়ে। বিধ্বস্ত হলেও শিষ্যদের আত্মবিশ্বাসের রসদ জুুগিয়ে ছিলেন। জানিয়ে ছিলেন, তোমরাই পারবে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরতে।
ক্যারিবীয় সফর শেষে দেশে ফিরেই খেলতে নামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আফ্রিকান প্রতিনিধিদের শুধু ওয়ানডে নয়, টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ করে। নিজেদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দলকে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা ৮ ম্যাচে হারায়। জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডেতে ৫-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে উড়ে যায় বিশ্বকাপ খেলতে। হার্ড ও বাউন্সি উইকেটের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে কতটা সফল হবে টাইগাররা, এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল হাজারো। কিন্তু বিশ্বাস ছিল হাতুরাসিংহের। আস্থা ছিল শিষ্য মাশরাফিদের ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান রেখে মাশরাফিরা ক্যানবেরায় প্রথম ম্যাচেই উড়িয়ে দেন আফগানিস্তানকে। বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্কটল্যান্ডের ৩১৮ রানও টপকে যায় সহজে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমকে দেয় ক্রিকেট বিশ্বকে। সেই যে আত্মবিশ্বাসের পারদ উপরে উঠছে, এখনো সেটা উঠছেই।
বিশ্বকাপ থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশে ফিরেন মাশরাফিরা। মুখোমুখি হয় প্রবল প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের। সেই পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে এমনই নাকাল করে যে, চমকে উঠে ক্রিকেট বিশ্ব। মোহাম্মদ হাফিজদের ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে। কোনো বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এতটাই দুর্ধর্ষ ব্যাটিং করেন যে, সিরিজে চার-চারটি সেঞ্চুরি করেন তামিম, মুশফিক, সৌমরা। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তামিম। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অবশ্য টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি রয়েছে শাহরিয়ার নাফিসের। শাহরিয়ারের মতো টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি রয়েছে তামিমেরও। তামিম ছাড়াও পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম এবং সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপ থেকেই তুখোড় ফর্মে টাইগার ব্যাটসম্যানরা এবং প্রায় প্রতি ম্যাচেই সেঞ্চুরি করছেন।
বিশ্বকাপ এবং পাকিস্তান সিরিজের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের সুখস্মৃতি নিয়ে মুখোমুখি হয় ভারতের। ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে বৃষ্টি বাধায় খেলা হতে পারেনি পুরোপুরি। তবে বৃহস্পতিবার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে বাধা হতে পারেনি বৃষ্টি। তবে নেমেছিল এবং বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা। কিন্তু কার্টেল হয়নি। নির্ভেজাল ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে তামিম, সৌম্য ও সাকিবের হাফসেঞ্চুরিতে ৩০৭ রান করে টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে যা প্রথম তিনশোর্ধ্ব ইনিংস। ৩০৮ রানের জবাবে মুস্তাফিজের কাটারে বিদিশা হয়ে ২২৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় ৭৯ রানে। অসাধারণ এই জয়কে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি প্রতিশোধের মানতে নারাজ। কিন্তু পুরো দেশ একই সুরে বলছে বিশ্বকাপের প্রতিশোধ বলে।
এই যে প্রতিশোধ, বদলা, কিংবা আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট- আজ সব করছে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা কঠোর পরিশ্রম করে। দুর্দান্ত খেলছেন তামিম, সৌম্য, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, মাশরাফি, তাইজুলরা। তাদের এক সুতোয় বেঁধেছেন চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ গত এক বছরে ২০ ওয়ানডে খেলে হেসেছে ১২ বার। যাতে রয়েছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও ভারতের মতো পরাক্রমশালী দল।
শিরোনাম
- ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ অক্টোবরে শেষের আশা প্রসিকিউশনের
- পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির
- দীর্ঘ বিরতির পর বিটিভিতে ফিরলো ‘নতুন কুঁড়ি’
- কলাপাড়ায় চিরকুট লিখে দর্জির আত্মহত্যার অভিযোগ
- সাগরে লঘুচাপ, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
- পাকিস্তানে ডনের সাংবাদিকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার
- অবৈধ অনুপ্রবেশ: দীঘিনালায় ভারতীয় যুবক আটক
- ‘আওয়ামী লীগের ভয়ংকর নির্যাতনের কাছে আদর্শচ্যুত হননি খালেদা জিয়া’
- বাংলাদেশকে ফোকলা করেছে এস আলম গ্রুপ: জোনায়েদ সাকি
- নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন জেসি
- সেই রিকশাচালককে কীসের ভিত্তিতে গ্রেফতার, ওসির ব্যাখ্যা তলব
- চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমছে পদ্মার পানি, দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবারের সংকট
- একনেক সভায় ১১ প্রকল্প অনুমোদন
- বিতর্ক যেন জাতীয় স্বার্থে আঘাত না হানে : আলাল
- অক্টোবরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু
- হাঁস খামার করে স্বাবলম্বী আখাউড়ার যুবক
- সরাইলে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত
- দুই গুণী শিল্পীকে নিয়ে ‘বেলা ও বিকেল’
- নড়াইলে নদীতে ভাসছিল অজ্ঞাত নারীর মরদেহ
- ভাদ্র ফিরেছে স্বরুপে, খরতাপে রাস্তা ফাঁকা
বদলে যাওয়া টাইগাররা
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর