প্রত্যেক মানুষের ভিতরই 'সম্মোহনী শক্তি' থাকে। কারোটা প্রকাশ পায়, কারোটা অগোচরেই থেকে যায়। কারও কারও 'সম্মোহনী শক্তি' আবার বেরিয়ে আসে কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হলে! তাহলে কী ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির আঘাতের কারণেই সাতক্ষীরার অজপাড়া গায়ের ১৯ বছর বয়সী ছেলেটার 'সম্মোহনী শক্তি' বেরিয়ে এসেছিল। যে শক্তির আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল ভারত।
নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কার কথা বলা হচ্ছে! মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষেক ম্যাচেই যিনি ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।
ভারতের ব্যাটিংয়ের ২৫তম ওভারে মহেন্দ্র সিং ধোনির আঘাতে মাঠ থেকেই বের হতে হয়েছিল অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমানকে। প্রথমে মনে হচ্ছিল হয়তো আর মাঠেই নামতে পারবেন না। কিন্তু সেই মুস্তাফিজই কিনা ফিরলেন বিধ্বংসী হয়ে। আঘাত পাওয়ার আগে সাত ওভারে দুই উইকেট নিয়েছিলেন, পরের দুই ওভারেই মুস্তাফিজ নেন ৩ উইকেট, ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন ভারতকে।
তবে মুস্তাফিজুর রহমান যে হঠাৎ করে এসেই 'ঝড়ে বক মারা'র কিছু ঘটিয়ে ফেলেছেন তা কিন্তু নয়! কিছু দিন আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচেও তিনি ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কাতারের বিরুদ্ধে ম্যাচে ৯ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার।
ওয়ানডেতে অবিস্মরণীয় অভিষেকের জন্য মুস্তাফিজ কৃতজ্ঞ থাকবেন কোচ হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক মাশরাফি তথা টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে। কেননা যেখানে তিন পেসার খেলার সিদ্ধান্তটাই বিলাসিতার মতো মনে হয় সেখানে ভারতের বিরুদ্ধে চমকে দিয়ে দলে চার পেসার রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। আর চতুর্থ পেসার হিসেবে সুযোগ পেয়েই তো বাজিমাত করলেন মুস্তাফিজ।
সাধারণত একজন পেসারের শারীরিক গঠন চিন্তা করলে চোখের সামনে যে অবয়ব ভেসে ওঠে মুস্তাফিজ তেমন নন। তার হ্যাংলা-পাতলা চেহারা দেখলে বোঝা কঠিন, তিনি একজন পেসার। ভাঙাচোরা চেহারার সেই তরুণই কিনা ধসিয়ে দিয়েছে বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক রোহিত শর্মাকে আউট করে উইকেটের খাতা খুললেন। তারপর একে একে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিলেন। অভিষেকেই ২২ গজে যেন মহাকাব্য রচনা করে ফেললেন মুস্তাফিজ! তবে আর একটু হলেই ফিদেল অ্যাডওয়ার্ডের বিশ্ব রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারতেন। ক্যারিবীয় পেসার অভিষেক ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। কাল আরেক উইকেট নেওয়ার সুযোগ এসেছিল মুস্তাফিজেরও। কিন্তু নিজের বলে নিজেই ক্যাচ মিস করে রেকর্ডটি হাতছাড়া করেছেন। তাতে কি? বিশ্ব রেকর্ড না হলেও অভিষেক ম্যাচেই 'সেরা খেলোয়াড়' হওয়া কয়জনের ভাগ্যে হয়। আর মাত্র এক ম্যাচ খেলেই কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের নয়নের মণি হওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!