দিনটা হতে পারত এমন; মুস্তাফিজের অফ কাটারে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইন, সাকিব-তাইজুলদের ঘূর্ণিপাকে মুখ থুবড়ে পড়ছেন আমলা-ডুমিনিরা। তারপর ব্যাট নিয়ে দক্ষ হাতে স্টেইন-মরকেল-ফিলান্ডারদের সামলে ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছেন তামিম-ইমরুলরা; কিন্তু হলো না। দিনটা হতে পারত এমনও; আগের তিন দিনের চেয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি গম গম করছে দর্শকদের চিৎকারে, দিন শেষে তারা বাড়ি ফিরছে টাইগারদের দেওয়া এক গৌরবদীপ্ত জয়ের স্বপ্নবুকে নিয়ে। এসবও হলো না। সাগরিকায় গত কয়েকদিন ধরে জমতে থাকা আকাশের কান্না সারা দিন অশ্রু হয়ে ঝরল। আর এ কান্নায় সিক্ত হলো টাইগারদের হৃদয়ও। নিরাসক্ত দিনটা ইনডোরে সামান্য গা গরম আর জুমার নামাজ আদায় করেই কাটল মুশফিকদের। আফ্রিকানরা কাটাল এরচেয়ে নিরাসক্তভাবে। স্টেডিয়ামে যাচ্ছি-যাই করতে করতে এমনকি আমলারা জুমার নামাজটাও আদায় করতে পারেননি।
বেরসিক বৃষ্টি ক্রিকেট থামিয়ে দিল। তাই বলে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকবেন টাইগাররা! এমনটা হয় কী করে! মুশফিকের নেতৃত্বে টাইগাররা বৃষ্টিমাথায় চলে এলেন সাগরিকায়। ইনডোরে ব্যাট-প্যাড পরে নেমে গেলেন অনুশীলনে। ব্যাট হাতে মুশফিকের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় অনুশীলন করলেন নিখাদ বোলার শহিদ, মুস্তাফিজ, যুবায়ের আর তাইজুলও। অনুশীলনে হয়তো গা গরম হলো কিন্তু হতাশা কী কাটল! দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন স্পষ্ট করেই জানালেন, মাঠে নামতে না পেরে ক্রিকেটাররা হতাশ। তার কথার সত্যতা মিলে, ক্রিকেটাররা মুখে কুলুপ এঁটে থাকায়। তারা নাকি মিডিয়ার সামনেই আসতে চায়নি!
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটা আরও ভালো হতে পারত বাংলাদেশের। ৭৮ রানের লিড নেওয়ার পর দুয়েকটা উইকেট দ্রুত নিতে পারলে বাংলাদেশ আরও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকত। সে ক্ষেত্রে পঞ্চমদিনেও যদি খানিকটা ক্রিকেট হতো প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করা সম্ভব ছিল। কথাগুলো বলছিলেন সুজন। কিন্তু দুয়েকটা উইকেট নিলেই বা কী হতো! আবহাওয়ার পূর্বাভাস যে বলছে, গতকালের চেয়েও বেশি বৃষ্টি হবে আজ! বিষয়টা স্বীকার করেন সুজনও। বললেন, 'আকাশের যে অবস্থা তাতে আগামীকাল (আজ) খেলা নাও হতে পারে। এ অবস্থায় বলা যায় টেস্টটা ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছে।' শ্রাবণে বৃষ্টি হবে এটাই কী স্বাভাবিক নয়! সুজনও তা জানেন। শুকনো মৌসুমে টেস্ট হলে এই ঝামেলায় হয়তো পড়তে হতো না। কিন্তু বাংলাদেশেরও যে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সুজন বলেন, 'বৃষ্টির মৌসুমে খেলার কারণ, বড় দলগুলোর খেলার সময়সূচি দেখেই আমাদের সিরিজ আয়োজন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।' হায়, ক্রিকেট বিশ্ব কবে বুঝবে এখন বাংলাদেশও ক্রিকেটাঙ্গনে সত্যিকারের বাঘ। চট্টগ্রাম টেস্টটা মাঠে গড়ালে প্রোটিয়াদের হারিয়ে হয়তো টাইগাররা ক্রিকেটের মুরবি্বদের সদর্পে বলতে পারত, এবার আমাদের সঙ্গে টেস্ট খেলে তোমরাও কিছু শিখে যাও।
আকাশের অবস্থা দেখে বলা যায়, চট্টগ্রাম টেস্টে হতাশাজনক ড্র নিয়েই ঢাকায় ফিরছে বাংলাদেশ। তবে ওয়ানডে সিরিজ জয় এবং প্রথম টেস্টের দুরন্ত পারফরম্যান্সকে সঙ্গী করে ঢাকা টেস্টে দারুণ কিছুর অপেক্ষায় আছেন টাইগাররা। সুজন বললেন, 'এই টেস্টে আমরা দারুণ খেলেছি। এই প্রেরণা নিয়েই আমরা ঢাকা টেস্টে আরও ভালো করার চেষ্টা করব।' সেই সঙ্গে সুজন দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও এখন ভালো খেলার সময় এসেছে।
অধিনায়ক মুশফিক ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যে টানা পাঁচটা দিন ভালো ক্রিকেট খেলার কথা বলেছিলেন তার তিন কিস্তি ঠিকই শোধ বোধ হয়েছে। বাকিটা বোধ হয় আর হলো না। বৃষ্টি বাগড়া দিলে মুশফিকেরই বা কী করার আছে!