ক্রিকেটের মুরুব্বিদের সঙ্গে টেস্ট লড়াইয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি হলে এক সময় ভক্তরা জপ করত- আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেবো মেপে। সেই স্নোগানটা বদলে এখন হয়েছে- লেবুর পাতায় করমচা, যা বৃষ্টি উড়ে যা। আকাশ কী আর বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা মেনে চলে! তার যখন কাঁদার প্রয়োজন পরিস্থিতি বিচার না করেই সবার সামনে নিঃসংকোচে কেঁদে উঠে। এতে কে ভিজল, কে শুকনো থাকল তাতে আকাশের কী! গতকালও তাই হলো। প্রয়োজনের তাগিদে সে কেঁদে উঠল। এতে যে বাংলাদেশ এক চমৎকার সুযোগ হারাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর, তাতে তার কিছু আসে যায় না। আকাশের কান্নায় ধুয়ে-মুছে সাফ চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন। সঙ্গে ভেসে গেল ক্রিকেটীয় উৎসবে মেতে উঠার সুযোগও। নিশ্চিত হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে প্রথম ড্র প্রাপ্তি। কিন্তু এমন প্রাপ্তি কে চেয়েছিল! প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ভক্তরা যে স্বপ্ন দেখেছিল টেস্ট জয়েরও।
৯১ টেস্টের ৭১টাতেই যে দল পরাজিত সে দল র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরের মুখোমুখি হলে সমর্থকরা কী আশা করতে পারে! যাদের অতীত আটকে আছে ইনিংস পরাজয়ের বৃত্তে। ড্র কিংবা লড়াকু হারের চেয়ে কল্পনা বেশিদূর যাওয়ার কথা নয়! টাইগাররা কিন্তু সমর্থকদের আশা বাড়িয়ে দিয়েছিল চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনেই। সে আশা চারাগাছ থেকে মহীরূহ রূপ নিয়েছিল তৃতীয় দিনের পর। আকাশে অন্ধকার মেঘ থাকার পরও ভক্তরা এক উজ্জ্বল দিনে তারচেয়েও উজ্জ্বল জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। সে জয় আর হলো কই! চট্টগ্রাম টেস্টের ভবিষ্যত দাঁড়াল; অনিবার্য ড্র। এমন ড্রয়ে কি আর প্রাণ ভরে! উৎসবের মঞ্চে জলসা জমে! বাংলাদেশ গত ৯১টা টেস্টের ৭টাতে জিতেছে। ড্র করেছে ১৩টাতে। এই ১৩টার ৬টাতেই বাংলাদেশ ড্র পেয়েছে বৃষ্টির বদান্যতায়। ২০০১ সালে বৃষ্টিই বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল টেস্টের প্রথম ড্র। সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন দিন খেলা হওয়ার পর বৃষ্টিই ম্যাচটা থামিয়ে দিয়েছিল। না হলে হিথ স্ট্রিক আর ফ্লাওয়ার ব্রাদার্সরা বাংলাদেশকে ড্র করতে দিতেন কী! এরপর আরও ৫টা টেস্ট বাংলাদেশ ড্র করেছে বৃষ্টির বদান্যতায়। তবে এটা সে সময়ের কথা যখন বাংলাদেশ টানা একটা দিন ব্যাটিং করতে পারলে ভাবত, বড় একটা অর্জন হলো। দিনে প্রতিপক্ষের দুয়েকটা উইকেট শিকার করলেও ভাবত, যাক দুয়েকটা ফাঁটল তৈরি করা গেল। পরিখার বাইরে দাঁড়িয়ে টেস্ট নামক ক্রিকেটের মজবুত কেল্লায় দুয়েকটা ফাঁটল ধরানোতেই যে দলটা গৌরব বোধ করত সে দলে পরিবর্তন এসেছে অনেক। এখন পরিখার উপর টাইগাররা গড়ে তুলেছে শক্ত পুল। মুস্তাফিজ-সাকিবদের ছোঁড়া বিচিত্র কামানের গোলায় প্রতিপক্ষের সুউচ্চ দেয়ালগুলো ধসিয়ে দেওয়ার জন্য দলটা পুরো প্রস্তুত। এখন কী আর বৃষ্টির দান 'ড্র'তে মন ভরবে দলটার! ভরবে না বলেই কাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কেউ কথা বলতে রাজি হলো না। অথচ ১০০ মিটারের দূরত্বে থেকে নির্বিঘ্নে তারা গা গরম করে গেল জিমনেশিয়ামে। যে ম্যাচের ভবিষ্যত ৯০ ভাগই নিশ্চিত হয়ে গেছে ড্র সেই ম্যাচ নিয়ে কথা বলারই বা কী আছে! লিটন দাসের বক্তব্যটা বাস্তব রূপ নিতে পারল না। ২০০ রানের মধ্যেই প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইনকে রুখতে চেয়েছিলেন তিনি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, গতকালের চেয়েও ভারি বর্ষণ হবে আজ। যদি তাই হয়, ম্যাচটা সম্ভবত আর মাঠেই গড়াবে না।
বাংলাদেশ ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ড্র ছাড়াও বৃষ্টির বদান্যতায় ড্র পেয়েছে আরও পাঁচটা। ২০০৪ সালে বুলাওয়েতে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ড্র করেছিল টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামেই বাংলাদেশকে ড্র উপহার দিয়েছিল বৃষ্টি। চট্টগ্রামে ২০১১ সালেও বৃষ্টি একটা ড্র উপহার দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি এসে ম্যাচ ড্র করে মিরপুরে।
বাংলাদেশ টেস্ট আঙিনায় সাকুল্যে জয় পেয়েছে ৭টা। এরমধ্যে ৫টাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বাকি ২টা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ইশ, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে জয় কী দারুণ এক সংযোজন হতো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর (চতুর্থ দিন খেলা হয়নি)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ২৪৮ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ৬১/০ (২১.১ ওভার) (ফন ঝিল ৩৩*, এলগার ২৮।)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩২৬/১০ (১১৬.১ ওভার) (তামিম ৫৭, ইমরুল ২৬, মুমিনুল ৬, মাহমুদুল্লাহ ৬৭, মুশফিক ২৮, সাকিব ৪৭, লিটন ৫০, শহীদ ২৫। স্টেইন ৩/৭৮, ফিল্যান্ডার ২/৪০, হারমার ৩/১০৫)। *তৃতীয় দিনের স্কোর