ঢাকা ডায়নামাইটসকে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন সিকুগে প্রসন্ন। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারেননি এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে ফিরিয়েই ৯ রানে রোমাঞ্চকর ম্যাচটি জিতে খুলনা টাইটানস। প্রথমে মাহমুদউল্লাহর অর্ধশতকে লড়াই করার পুজি পায় খুলনা। বাজে ফিল্ডিং ও ব্যাটিং ব্যর্থতায় টানা তিন জয়ের পর হারতে হয় তারকা খচিত ঢাকাকে। বিপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতক করা প্রসন্নর ঝড়ের পরও ১৯ ওভার ১ বলে ১৪৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ঢাকা।
পাঁচটি ক্যাচ ছাড়লেন ঢাকা ডায়নামাইটসের ফিল্ডাররা। দুবার করে জীবন পান আন্দ্রে ফ্লেচার ও মাহমুদউল্লাহ। আন্দ্রে ফ্লেচার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। তবে পেরেছেন মাহমদুউল্লাহ। তার অধিনায়কোচিত ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজি গড়েছে খুলনা টাইটানস। অধিনায়কের অর্ধশতকের ওপর ভর করে ৫ উইকেটে ১৫৭ রান করে খুলনা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবারের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। চতুর্থ বলেই ভাঙে তাদের উদ্বোধনী জুটি। নিজের ভুলেই ‘ডায়মন্ড ডাক’ পান হাসানুজ্জামান। ২ রানে মোসাদ্দেক হোসেন ও ৯ রানে নাসির হোসেনের হাতে জীবন পান ফ্লেচার। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ক্যারিবিয়ান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। সানজামুল ইসলামকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাসিরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।
এরপর খুলনার স্কোর হঠাৎ করেই গতি পায় শুভাগত হোম চৌধুরী ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। ৪.৩ ওভারে তারা গড়েন ৪৪ রানের জুটি। ডোয়াইন ব্রাভোকে টানা দুটি চার হাঁকানো শুভাগত পরাস্ত হন গতিতে। ফুল লেংথের বল তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। একটি করে ছক্কা-চারে ১৬ রান করা নিকোলাস পুরানকেও ফেরান ব্রাভো। প্রথমবারের মতো খেলতে নামা তাইবুর রহমানের সঙ্গে ৬ ওভারে ৫৭ রানের আক্রমণাত্মক জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৩৪ ও ৩৬ রানে জীবন পাওয়া অধিনায়ক ফেরার আগে করেন ৬২ রান। চলতি আসরে এটাই তার প্রথম অর্ধশতক। মাহমুদউল্লাহর ৪৪ বলের ইনিংসটি গড়া চারটি করে ছক্কা-চারে। ২১ রানে অপরাজিত থাকেন তাইবুর। ১ রান করেই একবার জীবন পান কেভন কুপার।
ঢাকা ঢাকা ডায়নামাইটসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী মোহাম্মদ শহীদের ওপর। চার ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। ম্যাট কোলস ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। ব্রাভো ২৭ রানে দুই উইকেট নিয়ে বোলারদের মধ্যে সফলতম।
১৫৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামেন ঢাকা ডায়নামাইটসের দুই ওপেনার কুমার সাঙ্গাকারা ও মেহেদি মারুফ। ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওভারের ব্যবধানে দুই উইকেট হারায় ঢাকা। আর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে নাসির হোসেনকে শফিউলের তালুবন্দি করেন কুপার। দলীয় ২২ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় ঢাকা।
দলীয় ৩০ রানের মাথায় ম্যাট কোলসকে বোল্ড করেন শফিউল ইসলাম। কিছুটা স্বপ্ন দেখাতে থাকেন সাকিব-মোসাদ্দেক জুটি। ইনিংসের ১০তম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিং আক্রমণে আসেন মোশাররফ রুবেল। এসেই সাকিবকে (৮) বোল্ড করেন তিনি। দলীয় ৬৮ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় ঢাকা। বিদায়ের আগে সাকিব ৩৮ রানের জুটি গড়েন মোসাদ্দেকের সঙ্গে।
ইনিংসের ১১তম ওভারে ডোয়াইন ব্রাভোকে বিদায় করেন তাইবুর রহমান। ব্যক্তিগত ৪ রান করে জুনায়েদ খানের তালুবন্দি হন ব্রাভো। দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা মোসাদ্দেককে ফিরিয়ে দেন মোশাররফ রুবেল। শুভাগত হোমের তালুবন্দি হওয়ার আগে মোসাদ্দেক ২৮ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় করেন ৩৫ রান। দলীয় ৮৩ রানের মাথা সাত উইকেট হারায় ঢাকা।
এরপর জুটি গড়েন সেকুজে প্রসন্ন এবং সাঞ্জামুল ইসলাম। ১৮তম ওভারে সাঞ্জামুল ব্যক্তিগত ১২ রানে মোশাররফ রুবেলের শিকারে ফিরে গেলেও ব্যাট হাতে ঝড় থামাননি ১৮ বলে অর্ধশতকের দেখা পাওয়া সেকুজে প্রসন্ন। এটি ছিল বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে দ্রুততম অর্ধশতক।
ইনিংসের ১৯তম ওভারে রান আউট হন সোহরাওয়ার্দি শুভ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ঢাকার দরকার হয় ১০ রান। বোলিংয়ে আসেন কেভিন কুপার। প্রথম বলেই বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রসন্ন। ১৪৮ রানে থামে ঢাকার ইনিংস। প্রসন্ন ২২ বলে সাতটি ছক্কার সাহায্যে করেন ৫৩ রান।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ নভেম্বর, ২০১৬/তাফসীর-১৮