রশিদ খান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। বিষয়টা এমন যে, আফগান ক্রিকেটের নাম বহির্বিশ্বে একাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। রশিদ খানের দাবি, শহীদ আফ্রিদিকে অনুসরণ করেন তিনি। চুলের স্টাইলটা ঠিকমতো আনতে পারেননি তিনি। কিন্তু রশিদ খানের বোলিং অ্যাকশনে আফ্রিদির ছায়া স্পষ্ট। সেই দ্রুত গতির রান–আপ, অগোছালোভাবে হাত ঘোরানো। চকিতে দেখলে মনে হবে পিছনের পা আগে পড়বে। সেটাই অধিকাংশ সময় তার লেগ ব্রেক আর গুগলি বুঝতে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে। আর সফলতা তো চোখে পড়ার মতো। এর ফলে বিদেশি লিগগুলোতে তাকে নেওয়ার জন্য টানা হেঁচড়া শুরু হয়ে গেছে। বিপিএল, আইপিএল, ক্যারিবীয়ান লিগ কিংবা বিগ ব্যাশ কোনো লিগেই খেলতে বাকি নেই তার। শুধু খেলেনই না, তাকে ছাড়া রশিদের দল একাদশই গঠন করে না। আর মাঠে নামার পর ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্তিতে ফেলতে একটু দেরি করেন এই আফগান তারকা, যা তার ক্যারিয়ারের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে যখন আফগানিস্তান দলে ডাক পেয়েছিলেন, তখন সেটা তার কল্পনার অতীত ছিল। সেই সফরে ৪টি ম্যাচে ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। ওভারপিছু রান দিয়েছিলেন মাত্র ৩.৬৫। পরের সিরিজে ৬ উইকেট। গড় ২৩.০০। এরপর ২০১৬'র গোড়ায় এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতেও নজর কাড়েন। তবে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর। ১১টা উইকেট নিয়ে দেশে ফেরেন রশিদ। এখন পর্যন্ত দেশে হয়ে ৩০ ম্যাচে হাত ঘুরিয়ে উইকেট পেয়েছেন ৭০, মানে ম্যাচপ্রতি ২/৩টা করে উইকেট পেয়েছেন তিনি। ইকোনোমিক রেটও ঈর্ষণীয় ৩.৯১। ১৮ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের হয়ে ২৭টি টি-টোয়েন্টিতে অংশ নিয়ে পেয়েছেন ৪২ উইকেট, যেখানে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৩ রানে ৫ উইকেট। সবচেয়ে বড় বিষয় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে যেখানে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি, সেখানে তার ইকোনোমিক রেট ৫.৯১। আর বিদেশি লিগগুলোতে ৮১ টি-টোয়েন্টিতে অংশ নিয়ে রশিদ পেয়েছেন ১১৮ উইকেট। সেখানেও তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৩ রানে ৫ উইকেট। আন্তর্জাতিক লিগগুলোতে সাধারণত প্রতিটি দলেই বিগ হিটার থাকেন। তাদের বিপক্ষে বল করে রশিদ রান দিয়েছে ৫.৮২ ইকোনোমিক রেটে। মানে লিগে আরও বেশি ভয়ঙ্কর রশিদ।
সম্প্রতি আবারও আলোচনায় উঠে আসার কারণ, তাকে ছাড়া এখন বিশ্ব একাদশ গঠন করা এক প্রকার অসম্ভব দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর বিচারে ২০১৭ সালের সেরা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি একাদশেও জায়গা করেছেন রশিদ খান। কিছুদিন আগের করা ২০১৭ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি একাদশেও জায়গা পেয়েছেন এই আফগান তারকা। ফলে এটা স্পষ্ট, যাকে বাইরে রেখে ক্রিকেটবোদ্ধাদের কাছে একাদশ গঠন করা অসম্ভব, তাকে বিদেশি লিগে টানাটানি হবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রসঙ্গত, টেস্টে ক্রিকেটে এখনও অভিষেক হয়নি আফগানিস্তানের। তাই এখনও টেস্টে তার ভয়ংকর বোলিং দেখতে পায়নি ব্যাটসম্যানরা। যে কারণে টেস্টের কোনো একাদশেও নেই রশিদ খান। অবশ্য গত বছরই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে আফগানিস্তান। শোনা যাচ্ছে, চলতি বছরই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরাতন ফরম্যাটে প্রবেশ করবেন রশিদ খানরা।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব