ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল সামনে। সূর্যকুমার যাদবের খুনে ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়ার পথে ছিল তারা। বিস্ফোরক এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেও শেষ পর্যন্ত যদিও তিনি পারলেন না দলের মুখে হাসি ফোটাতে। তার ঝড় থামিয়ে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এড়াল ইংল্যান্ড।
ট্রেন্ট ব্রিজে রবিবার (১০ জুলাই) তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১৭ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজটি আগেই ঘরে তুলেছে রোহিত শর্মার দল। দাভিদ মালানের ৭৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস ও লিয়াম লিভিংস্টোনের অপরাজিত ৪২ রানের সুবাদে ২১৫ রানের পুঁজি গড়ে ইংল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে যা তাদের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২০০৭ সালে করা ৬ উইকেটে ২০০ রান। ইংল্যান্ডে দুইশ রানের লক্ষ্যে জিততে পারেনি কোনো দল। রেকর্ড ১৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের কীর্তি ২০১৮ সালে গড়েছিল ভারতই। সূর্যকুমারের ব্যাটে এবার সেটা ভাঙার সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত তারা থামে ৯ উইকেটে ১৯৮ রানে।
চারে নেমে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ১১৭ রানের ইনিংস খেলেন সূর্যকুমার। ৫৫ বলের ইনিংসটি সাজান ৬ ছক্কা ও ১৪ চারে। এক রানের জন্য তিনি স্পর্শ করতে পারেননি দেশের হয়ে এই সংস্করণে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোহিত খেলেছিলেন ১১৮ রানের ইনিংসটি। বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি রিশাভ পান্ত, বিরাট কোহলি ও অধিনায়ক রোহিত। ৩১ রানে ৩ উইকেটে হারানো দলকে টানেন সূর্যকুমার ও শ্রেয়াস আইয়ার। ডেভিড উইলিকে পরপর চার-ছক্কা মেরে ডানা মেলে দেন সূর্যকুমার। পরে লিভিংস্টোনের লেগ স্পিনে ওভারে মারেন ৩ চার। ৩২ বলে ফিফটিতে পা রাখেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। পঞ্চাশের পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। তার সামনে যেন বল ফেলার জায়গাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না ইংলিশ বোলাররা। মাঠের চারপাশে দারুণ সব শটে আদায় করে নিতে থাকেন বাউন্ডারি।
লিভিংস্টোনের এক ওভারে শ্রেয়াস ও সূর্যকুমার মিলে হাঁকান তিন ছক্কা। পরের ওভারে রিচার্ড গ্লিসনকে একটি করে ছক্কা-চার মারেন সূর্যকুমার। ক্রিস জর্ডানকে ওভারে দুই চারের সঙ্গে এক ছক্কা মেরে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান তিনি। রিস টপলির পর উইলিকে চার মেরে ৪৮ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি। ফিফটির পর সেঞ্চুরিতে পা রাখতে তার লাগে স্রেফ ১৬ বল। ভারতের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন তিনি। শেষ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৪১ রান। মইন আলির ওপর ঝড় বইয়ে দেন সূর্যকুমার। তিন বলে দুই চার ও এক ছক্কা মেরে তিনি ওই ওভারেই বিদায় নেন ছক্কার চেষ্টায় লং-অফে ধরা পড়ে। এরপর আর পেরে ওঠেনি ভারত।
গত ৬ বছরে ২৬ ম্যাচ পর টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা ভালো হয়নি। ঝড়ের আভাস দিয়ে ফিরে যান জস বাটলার। জেসন রয় ও ফিল সল্টও করতে পারেননি তেমন কিছু। হার্শাল প্যাটেলকে চার মেরে রানের খাতা খোলা মালান ফিরতে পারতেন পরের বলেই। কিন্তু স্লোয়ার বলে আসা ফিরতি ক্যাচ ধরতে পারেননি ভারতীয় পেসার। জীবন পেয়ে ভারতীয় বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান মালান। ৩০ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। মালানকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে দলের রানের গতিতে দম দেন লিভিংস্টোনও।
ওভারে জোড়া শিকার ধরেন রবি বিষ্ণই। তরুণ লেগ স্পিনারকে সুইপ করে আকাশে তুলে দিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন ৫ ছক্কা ও ৬ চারে ৩৯ বলের ইনিংস সাজানো মালান। একই শট খেলে মইন আলি ক্যাচ দেন পয়েন্টে। ৪ ছক্কায় ২৯ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন লিভিংস্টোন। ৩ চারে ৯ বলে ১৯ রান করেন হ্যারি ব্রুক। একটি করে ছক্কা-চারে ১১ রান আসে ক্রিস জর্ডানের ব্যাট থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ২১৫/৭ (রয় ২৭, বাটলার ১৮, মালান ৭৭, সল্ট ৮, লিভিংস্টোন ৪২*, মইন ০, ব্রুক ১৯, জর্ডান ১১; আভেশ ৪-০-৪৩-১, উমরান ৪-০-৫৬-১, বিষ্ণই ৪-০-৩০-২, জাদেজা ৪-০-৪৫-০, হার্শাল ৪-০-৩৫-২)
ভারত: ২০ ওভারে ১৯৮/৯ (রোহিত ১১, রিশাভ ১, কোহলি ১১, সূর্যকুমার ১১৭, শ্রেয়াস ২৮, কার্তিক ৬, জাদেজা ৭, হার্শাল ৫, আভেশ ১*, বিষ্ণই ২; উইলি ৪-০-৪০-২, টপলি ৪-০-২২-৩, গ্লিসন ৪-০-৩১-১, জর্ডান ৪-০-৩৭-২, লিভিংস্টোন ২-০-৩৬-০, মইন ২-০-৩১-১)
ফল: ইংল্যান্ড ১৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিস টপলি
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে ভারত
ম্যান অব দা সিরিজ: ভুবনেশ্বর কুমার
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ