গত মৌসুমে ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের পর প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামল ম্যানচেস্টার সিটি। শুরু থেকে মেলে ধরল আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা, কিন্তু আক্রমণগুলো ধারের অভাবে পাচ্ছিল না পূর্ণতা। অবশেষে দ্বিতীয়ার্ধে জালের দেখা পেল সিটি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের রোমাঞ্চ আর শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকার পেরিয়ে সিটিকে হারিয়ে কমিউনিটি শিল্ড জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতল আর্সেনালই।
প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে হয় কমিউনিটি শিল্ডের লড়াই। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি দু'টি টুর্নামেন্টেরই শিরোপা জেতায় খেলার সুযোগ পায় লিগ রানার্স আপ আর্সেনাল। ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে রবিবার (৬ আগস্ট) টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়।
টাইব্রেকারে আর্সেনালের মার্টিন ওডেগোর, লিয়ান্দ্রো ত্রোসার, বুকায়ো সাকা ও ফাবিও ভিয়েরা পান জালের দেখা। সিটির হয়ে প্রথম শট নিতে আসা কেভিন ডে ব্রুইনে মারেন ক্রসবারে। তৃতীয় শটে ব্যর্থ হন রদ্রিও; জালের দেখা পান কেবল বের্নার্দো সিলভা।
২০১৯ সাল ষষ্ঠ এবং সবশেষ এই শিরোপা জেতা সিটির অপেক্ষা আরও বাড়ল। গতবার ফাইনালে তারা লিভারপুলের কাছে হেরেছিল ৩-১ গোলে। ২০২০ সালের পর এই মুকুট ফিরে পেল আর্সেনাল; সব মিলিয়ে তাদের অর্জনের শোকেসে শিল্ডের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭টি।
ম্যাচের আগে ক্লাব ফুটবলের ঠাসা সূচি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন সিটি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা। এমনকি গত মৌসুম শেষে বিশ্রামের সময় কম পাওয়ায় নিজেদের তুলনায় এগিয়ে রেখেছিলেন আর্সেনালকে। কিন্তু মাঠে খেলায় শুরু থেকে বলের নিয়ন্ত্রণে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখালেন হলান্ড-গ্রিলিশরা; যদিও তাদের আক্রমণগুলো ছিল ধারহীন। চতুর্দশ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে সিটির রদ্রির নিচু শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। একটু পর ডাগআউটে কার্ড দেখানোর ভঙ্গি করে হলুদ কার্ড দেখেন আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতা।
কোণঠাসা আর্সেনালই ২৫তম মিনিটে গোলের সেরা সুযোগটি তৈরি করে। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা বেন হোয়াইটের পাস ধরে শট নেন কাই হাভার্টজ; কোনোমতে পা দিয়ে ফেরান গোলরক্ষক, কিন্তু বল চলে যায় ফাঁকায় থাকা গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির পায়ে। তার শট বুক দিয়ে আটকান স্টোনস। এই আক্রমণের পর সাহসী হয়ে ওঠে আর্সেনাল। ফলে এক পর্যায়ে বলের নিয়ন্ত্রণে সিটির প্রায় ৮৩ শতাংশ এগিয়ে থাকায় টান পড়ে। বিরতির আগে বলের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা ফিরে পায় ‘গানার’রা। ৩৯তম মিনিটে আবারও হতাশ হতে হয় তাদের। বুকায়ো সাকার কাট ব্যাকে হাভার্টজের শট ফেরান গোলরক্ষক। ৪৩তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে দূরপাল্লার শটে অবিশ্বাস্য চেষ্টা করেছিলেন রদ্রি। কিন্তু বল উপরের জাল কাঁপায়। তাতে ৬২ শতাংশ বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও পোস্টে শট রাখতে না পারার হতাশা নিয়ে প্রথম অর্ধ শেষ করে সিটি।
৫২তম মিনিটে প্রথম পোস্টে আক্রমণ রাখতে সক্ষম হয় সিটি। তবে স্টোনসের হেড সরাসরি যায় গোলরক্ষক অ্যারন র্যামসডেলের কাছে। ৭০তম মিনিটে কোল পালমারের শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ক্রসবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। অবশেষে ৭৭তম মিনিটে খোলে ম্যাচের 'ডেডলক।' বদলি নামা ডে ব্রুইনের হেড পাস ধরে ঠাণ্ডা মাথার কোনাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন পালমার। এগিয়ে যায় সিটি। বুনো উদযাপনে মেতে ওঠেন দলটির কোচ গুয়ার্দিওলাও। ২১ বছর ৯২ দিন বয়সে এই প্রতিযোগিতায় গোল করলেন পালমার। ২০০৫ সালে ১৮ বছর ৯৫ দিন বয়সে সেস ফাব্রেগাসের গোলের পর সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে জালের দেখা পেলেন এই তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার।
নতুন নিয়মে আট মিনিট যোগ করা সময় দেওয়া হয়। তাতে আর্সেনালের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা বেঁচে থাকে। বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে কাইল ওয়াকার ও থমাস পার্টির মধ্যে সংঘর্ষ হলে খেলা বন্ধ থাকে কয়েক মিনিট। চিকিৎসার পর শুরু হয় খেলা। যোগ করা সময়ের একাদশ মিনিটে সাকার কর্নার ফিরে আসার পর ত্রোসার পায়ে যায় বল, তার শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক পাল্টে গোলরক্ষককে বিভ্রান্ত করে খুঁজে নেয় জাল। ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই বাজিমাত করে আর্সেনাল।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ