গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহ হয়তো সামান্য কমেছে কিন্তু আর্দ্রতা এখনো রয়ে গেছে। বর্ষাকালে আর্দ্রতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে, যার ফলে ঘাম হয়। মেকআপও গলে যায়। এমন দিনে আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি। সেক্ষেত্রে বদল আনতে হবে প্রসাধনীতেও। তবেই মিলবে সমাধান...
আয়োজন (উপলক্ষ) অনুযায়ী যেমন- পোশাক নির্বাচন করা উচিত, তেমনি আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি। আমাদের ত্বক প্রতি ঋতুতে পরিবর্তিত হয়। আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ত্বকের ক্ষেত্রে স্পষ্টতই ফুটে ওঠে। যদিও অনেকে একে সাধারণ বিষয় বলে এড়িয়ে যান। আবার অনেক ভাগ্যবান আছেন, যাদের ত্বকের ধরন সব ঋতুতে প্রায় একই থাকে। কিন্তু যাদের ত্বক পরিবর্তিত হয়- বর্ষাকালে তাদের ব্যবহার উপযোগী কিছু পণ্যের আদ্যোপান্ত নিয়ে এই ফিচার-
বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত মানে- দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজমান থাকবে। তাই বর্ষাকালের মেকআপ, এমনকি নিয়মিত ত্বকচর্চায়ও হবে অনেকটা আলাদা। এর কারণ- আর্দ্র আবহাওয়া ত্বকে জ্বালা তৈরি করে এবং মেকআপ সহজেই গলে যায়। দেখে নেওয়া যাক এই বর্ষাকালে সেরা দেখানোর সেরা উপায়গুলো...
► লিপস্টিক : আর্দ্র আবহাওয়ায় যেহেতু মেকআপ গলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা লিপস্টিকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই দীর্ঘস্থায়ী লিপস্টিকের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। একটি দীর্ঘস্থায়ী ম্যাট লিপস্টিক আপনার মেকআপ লুককে সারা দিন টিকিয়ে রাখবে। যদি ম্যাট লিপস্টিক না থাকে, তবে সাধারণ লিপস্টিক লাগিয়ে উপরে কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে একে সেট হতে দিন। কয়েক মিনিট পর এর ওপর আবার লিপস্টিক লাগান এবং সেট হতে দিন। এই কৌশলী পদ্ধতি লিপস্টিককে মোটেও স্মাজ করবে না।
► আই মেকআপ পণ্য : বর্ষায় মেকআপের জন্য সঠিক আই মেকআপ পণ্য থাকা জরুরি। তবে সেগুলো হতে হবে- ওয়াটারপ্রুফ এবং সোয়েটপ্রুফ, কারণ কখন বৃষ্টি হবে এবং কখন ভিজে যাবেন সেটা অনিশ্চিত। অর্থাৎ যদি বৃষ্টিতে ভিজেও যান, তাহলে আপনার মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে এবং স্মাজড আই ভীতিকর জিনিসগুলোর একটি। এ জন্য ক্রুয়েলটি-ফ্রি আইলাইনার ব্যবহার করুন, যা ওয়াটারপ্রুফ এবং স্মাজপ্রুফও। এটি আই মেকআপকে স্থির রাখতে সাহায্য করবে। চাইলে ভেগান আইলাইনার পেনও ব্যবহার করতে পারেন, যা অত্যন্ত নিরাপদ। শুধু চোখের জন্য নয়, বরং প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্যও।
► ওয়াটারপ্রুফ ফাউন্ডেশন : বর্ষায় একটি ভালো ওয়াটারপ্রুফ এবং সোয়েটপ্রুফ ফাউন্ডেশন আপনার বেস মেকআপকে ত্রুটিহীন করে তোলে। এটি শুধু বেস মেকআপই সম্পূর্ণ করে না, পুরো মেকআপকে ঠিক জায়গায় রাখে এবং লুককে একত্রিত করে। ত্রুটিহীন বেস এবং দীর্ঘস্থায়ী ফিনিশের জন্য সর্বদা প্রাইমার দিয়ে মেকআপ শুরু করুন। মুখের বৈশিষ্ট্য হাইলাইট করতে এবং বেস মেকআপ সম্পূর্ণ করতে কনসিলারও প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি ভালো মানের একটি সেটিং স্প্রে দিয়ে মেকআপ প্রাথমিক ধাপ শেষ করতে ভুলবেন না।
► কমপ্যাক্ট পাউডার : বর্ষায় মেকআপের অংশ হিসেবে কমপ্যাক্ট পাউডার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মেকআপ সেট করতে সাহায্য করে। তৈলাক্ত ত্বককে তাৎক্ষণিক ম্যাট লুক এনে দেয়। কমপ্যাক্ট পাউডার যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে মেকআপকে সতেজ করতেও সাহায্য করে। ভারী মেকআপে অনীহা হলে প্রাইমার লাগিয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে মেকআপ শেষ করতে পারেন। এটি কেবল ত্বককে উজ্জ্বল দেখাবে না বরং মেকআপকেও সতেজ এবং দীর্ঘস্থায়ী করবে।
► সানস্ক্রিন : বর্ষার স্কিনকেয়ারেও সানস্ক্রিন লোশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। কারণ আবহাওয়া বা ঋতু যাই হোক না কেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে সব সময় সানস্ক্রিন ত্বকের সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। তাই সব দিন এবং সব আবহাওয়ায় সানস্ক্রিন অত্যন্ত জরুরি।
► হেয়ার কেয়ার পণ্য : বর্ষায় চুলের যত্ন নেওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্ষার আবহাওয়া মাথার ত্বককে সহজে ঘামিয়ে তোলে। ফলাফল হিসেবে দেখা দেয়- খুশকি এবং চুলকানি, যা ধীরে ধীরে চুল পড়ার দিকে নিয়ে যায়। এর সমাধানে ভেগান হেয়ার প্রোডাক্ট বেছে নিতে পারেন। যা শুধু চুলের যত্ন নয়, বরং হালকা এবং চুলের বৃদ্ধিতেও ভূমিকা পালন করবে। যদি চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়, তবে সপ্তাহে অন্তত দুবার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়া নিশ্চিত করুন এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
এ ছাড়াও সপ্তাহে একবার হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিবার চুল ধোয়ার সময় এবং যে কোনো ধরনের হিটিং টুল ব্যবহার করার আগে হেয়ার সিরাম ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
► পারফিউম : সারা দিন সতেজ এবং সুগন্ধি থাকা সবারই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কারণ এটি আপনার ব্যক্তিত্ব তৈরি করে। এ ছাড়া আপনার পারফিউম শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতেও সাহায্য করে। তবে পারফিউম ব্যবহারের সেরা উপায় হলো পালস পয়েন্ট- যেমন : কানের পেছনে, কব্জিতে, কনুইয়ের ভিতরের দিকে এবং চুল আঁচড়ানোর সময় হেয়ার ব্রাশে সামান্য পরিমাণে প্রয়োগ।
► ফেসওয়াশ : বর্ষার স্কিনকেয়ারে ফেসওয়াশ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। সকালে এবং দিনের কাজ শেষ হওয়ার পর মুখ পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি নিশ্চিত করে যে, ত্বক সব ধরনের ময়লা, ধুলো, দূষণমুক্ত। আর্দ্র আবহাওয়া ত্বকে বেশি ময়লা জমতে সাহায্য করে। ত্বককে ঘামায় যা আঠালো হয়ে যায়। এই ময়লা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে অন্যথায় ব্রণ এবং পিম্পলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত দুবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া অপরিহার্য।
► টোনার : সবশেষে স্কিনকেয়ারে টোনার নিশ্চিত করুন। কারণ আপনার টোনার রোমকূপের ছিদ্র ছোট করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে ভিতর থেকে হাইড্রেট করে। মুখ ধোয়ার পর একটি টোনার লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। দিনের বেলায় সতেজ অনুভূতির জন্য আপনার টোনারকে ফেসমিস্ট হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
লেখা : ফেরদৌস আরা