বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পতনের ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্রের যত ব্যাংক

তানভীর আহমেদ

পতনের ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্রের যত ব্যাংক

হঠাৎ কী হলো ?

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন বা এফডিআইসি আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানতের সুরক্ষা দেয়। তার বেশি নয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে, আমানতের পরিমাণ যাই হোক না কেন তাদের ক্ষতি হবে না। মার্কিন বিশিষ্ট চারজন অর্থনীতিবিদ মনে করেছেন সাম্প্রতিক সুদের হার বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা সম্পদের বাজারমূল্যে ব্যাপক পতন ঘটেছে। ব্যাংকের গ্রাহকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের টাকা কী ব্যাংকের কাছে সুরক্ষিত আছে? ব্যাংকের কাছে টাকা নেই- এমন গুজবে আতঙ্কিত হয়ে গ্রাহকরা একসঙ্গে ছুটে যান ব্যাংকে। তারা আমানত ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করলে ব্যাংকগুলো তাদের সিকিউরিটিজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এতে বড় ক্ষতিতে পড়ে ব্যাংকগুলো। এটাই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক, সিগনেচার ব্যাংক ও সিলভারগেট ব্যাংকের ক্ষেত্রে।  এক সপ্তাহে তিনটি ব্যাংকই দেউলিয়া হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংক তিনটি। মার্কিন অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে অন্য ব্যাংকগুলোও দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।

 

২০০ ব্যাংক নিয়ে দুশ্চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্রবাসী

গুজবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া, শেয়ার বাজারে ধস ও সুদের হার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ব্যাংকগুলো ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে। মার্কিন ব্যাংকিং ইতিহাসে এমন চরম সংকটময় অবস্থা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। ফেডারেল রিজার্ভ গত এক বছরে সুদের হার বাড়ানোর কারণে পুরনো ও কম সুদের বিনিয়োগও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এক সপ্তাহে তিনটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায় দেশটিতে। বৈশ্বিক আর্থিক সংকট ও চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক পরিস্থিতি যে নাজুক তার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্ক (এসএসআরএ) তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রায় ২০০টি মার্কিন ব্যাংক পতনের শঙ্কায় রয়েছে। তহবিল তুলে নিতে ব্যর্থ হতে পারে ১৮৬টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর বিমার আওতায় থাকা আমানতকারী অর্থাৎ যাদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ আড়াই লাখ ডলার বা এর কম, তারাও টাকা পেতে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘তাদের গবেষণা অনুযায়ী এই ব্যাংকগুলোতে সরকারি হস্তক্ষেপ বা পুনঃমূলধনের ব্যবস্থা না করা গেলে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি কোনোভাবেই কমবে না।’ এ অবস্থায় উদ্বেগের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এসব ব্যাংকের সম্পদের বড় একটি অংশ সরকারি বন্ডের মতো অস্থিতিশীল ব্যাংকে রক্ষিত আছে। ফলে সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে এসব বন্ড হঠাৎ করে অলাভজনক হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। অর্ধেক গ্রাহক যদি আকস্মিক আমানত তুলে নেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০০ ব্যাংকের পতন ঘটবে। 

 

সিইওর যে ভুলে বন্ধ হয়ে যায় সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক

শুধু সময়মতো ঝুঁকি অনুধাবন করতে না পারায় সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বা এসভিবি বন্ধ হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাংকটি তাদের মূলধন দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বন্ড আকারে রেখেছিল। তারা ভেবেছিল এ টাকা প্রাথমিকভাবে নিরাপদেই আছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত আট মাস এসভিবিতে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অফিসার ছিলেন না। তাই ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। অথচ তাদের ব্যালেন্স শিট ভালো ছিল। এ ছাড়া আমানত সঞ্চয়কারীদের জন্য সম্পদ হলেও ব্যাংকের জন্য তা দায়। সে রকম ১৭৫ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার দায়ের বিপরীতে এসভি ব্যাংক প্রায় সমপরিমাণ মার্কিন সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ড কিনেছিল। মনে করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বন্ড এটি। কিন্তু এই নিরাপদ বন্ডও শেষ পর্যন্ত এ ব্যাংকটিতে বাঁচাতে পারেনি। এসভিবির বন্ডগুলো কিনেছিল কভিডকালীন। তখন এগুলোর দামও ছিল বেশি। তখন বন্ডের ওপর সুদ ছিল প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। করোনার সময় বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দারুণ লাভ করছিল। তাদের লাভের বড় অংশ এই ব্যাংকে রাখতে শুরু করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে তখন শেয়ারবাজার অনিশ্চিত থাকায় এসভিবি প্রায় সব আমানত সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করে। করোনার লড়াই শেষে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতি। নতুন প্রেক্ষাপটে কোথায় কীভাবে বিনিয়োগ করা যায় সে বিষয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকটির সিইও গ্রেগ বেকার। ফেডারেল রিজার্ভ গত এক বছরে সুদের হার বাড়ানোর কারণে পুরনো ও কম সুদের বিনিয়োগও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। সংকট শুরু হলে গ্রাহকের আমানত ফেরত দেওয়ার জন্য মেয়াদ পূরণের আগেই হঠাৎ এসব বন্ড বিক্রির কারণে বড় লোকসানে পড়ে এসভিবি। এতে ২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির বিষয়টি ঘোষণা দেওয়া হলে দরপতন শুরু হয় ব্যাংকটির শেয়ারে। এখন আগে কেনা বন্ডগুলোর বাজারদর ভালো না থাকায় তিনি সেগুলোর মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। সেটিই তার কাল হলো। বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে।  টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে। আমানতকারীরা এক দিনে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার তুলে নেন- বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকটি।    

 

যেভাবে ১১টি ব্যাংক মিলে ঠেকাল আরেকটি ব্যাংকের পতন

গণমাধ্যমেই খবর ছড়িয়ে পড়ে পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরেকটি মার্কিন ব্যাংক যার নাম ‘ফার্স্ট রিপাবলিক’। সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক এ ব্যাংকটির পতন ঠেকাতে এগিয়ে আসে ১১টি ব্যাংক। গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার কোটি ডলার আমানত জোগাড় করে এই ১১টি ব্যাংক। ফার্স্ট রিপাবলিকের পতনের আশঙ্কায় অগ্রিম সতর্কতা হিসেবে ব্যাংকটিতে অর্থ জমা করেছে শীর্ষ ব্যাংকগুলো। ফার্স্ট রিপাবলিকে অর্থ জমা করেছে ব্যাংক অব আমেরিকা, সিটি গ্রুপ, জেপিমরগান চেজসহ যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি প্রাইভেট ব্যাংকের একটি কনসোর্টিয়াম। কোনো ধরনের গ্যারান্টি ক্লজ বা বিমা ছাড়াই এসব অর্থ জমা রাখবে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া গোল্ডম্যান স্যাকস এবং মরগান স্ট্যানলি ২.৫ বিলিয়ন ডলার করে জমা রাখবে ব্যাংকটিতে। পাশাপাশি স্টেট স্ট্রিট, পিএনসি ব্যাংক, ট্রুইস্ট, বিএনওয়াই-মেলন ব্যাংকগুলোও জমা রাখবে ১ বিলিয়ন ডলার করে। গ্রুপটি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা একসঙ্গে আমাদের বৃহত্তর সিস্টেম, আর্থিক শক্তি এবং তারল্যকে সেখানেই সরবরাহ করছি, যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

 

আতঙ্কিত সবাই একসঙ্গে টাকা তুলে নিতে চাওয়ায় বন্ধ হলো ব্যাংকটি

গুজবের দাবানলে পুড়ল সিগনেচার ব্যাংক

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধের তিন দিনের মধ্যে নিউইয়র্কভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক তার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণা করে এর নিয়ন্ত্রণ নেয় ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)। ফলে এক যুগের ব্যবধানে তৃতীয় বড় পতন দেখল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাত। সিগনেচার ব্যাংক ঋণ দিত মূলত আবাসন খাতে। সেই সঙ্গে তারা সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রাহকদের টানতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে সেসব আশায় গুড়েবালি। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক শুরু হলে সিগনেচার ব্যাংকের গ্রাহকরাও জানতে চান, তাদের আমানত সুরক্ষিত কি না। অনেকের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন- ‘তাদের আমানতের পরিমাণ আড়াই লাখ ডলারের বেশি?’ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন বা এফডিআইসি আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানতের সুরক্ষা দেয়, তার বেশি নয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে আমানতের পরিমাণ যাই হোক না কেন, তাদের ক্ষতি হবে না। কিন্তু গুজব একবার ছড়িয়ে পড়লে দাবানলের মতো হয়ে যায়। যার বলি হলো সিগনেচার ব্যাংক। এসভিবি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সিগনেচার ব্যাংকের গ্রাহকরা আমানত তুলে নিতে শুরু করেন।  সেই ঘটনায় তাদের শেয়ার দর পড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের জানায়, তারা ব্যাংকটি বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। আতঙ্কিত সবাই একসঙ্গে টাকা তুলে নিতে চাওয়ায় ব্যাংকটি অবশেষে বন্ধ হয়ে যায়।

 

টুইটার থেকে আতঙ্ক  গুজব ছড়িয়ে পড়ে

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে সাম্প্রতিক অস্থিরতার খবর টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে  আতঙ্কিত হন ব্যাংকের গ্রাহকরা। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ওয়াল স্ট্রিট থেকে অতিরিক্ত ৫ লাখ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে- এমন খবর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে ব্যাংকটির গ্রাহকদের ওপর। তারা মনে করেন, ব্যাংকটি দেউলিয়া হতে পারে। সেখান থেকেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। শেয়ারের দাম কমতে থাকে এবং একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে তা সাধারণ আমানতকারীদের মধ্যে আরও আতঙ্ক তৈরি করে। এতে এসভিবিসহ অন্য ব্যাংকেও আমানত তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে। এখনো ‘এসভিবি সমমানের’ ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীরা তাদের অর্থ তুলে নেওয়া বন্ধ হচ্ছে না বলে খবর প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক পোস্ট। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাংকগুলোর সম্পদের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ভিত্তিতে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়েছে।

 

একের পর এক ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যম সারির ব্যাংকগুলোর শেয়ার পতন কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। আতঙ্কিত গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করলে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা শুরু হয়। তার জোর ধাক্কা লেগেছে শেয়ারবাজারেও। যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। ইউরোপের দেশ স্পেনের স্যানটানডার ও জার্মানির কমার্স ব্যাংকের শেয়ার দর ১০ শতাংশের বেশি পড়ে যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর। শুধু গত সোমবারই দেশটির ব্যাংকগুলোর বাজার মূলধন কমেছে ৯০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার কোটি ডলার। টানা চার দিনে তাদের বাজার মূলধন হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯০ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার কোটি ডলার।  যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আবার সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে আঞ্চলিক ব্যাংকগুলো।

 

আড়াই লাখ ডলারের বেশি আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি

সমাধানের পথ খুঁজছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

গ্রাহকদের আতঙ্ক কমাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আড়াই লাখ ডলারের বেশি আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারেননি আমানতকারীরা। সংবাদমাধ্যমকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘সিলিকন ভ্যালি এবং সিগনেচার ব্যাংকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা যেন তাদের সঞ্চিত অর্থ ফিরে পান সে জন্য অর্থমন্ত্রী জানেত ইয়েলেন এবং জ্যেষ্ঠ অর্থ উপদেষ্টা লায়েল ব্রেইনার্ড তার নির্দেশক্রমে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি খুশি তারা একটি সমাধানে পৌঁছেছে, যেটি ছোট ব্যবসা ও মার্কিনিদের অর্থ রক্ষা করবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিরাপদ রাখবে। এই সমাধান আরও নিশ্চিত করেছে করদাতাদের অর্থ ঝুঁকিতে পড়বে না।’  তিনি আরও বলেছেন, ‘এই বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করব।’

 

বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা

যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে একের পর এক ব্যাংক ধসে পড়ার ঘটনায় পৃথিবীজুড়ে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আর্থিক খাতে কোনো কোনো দেশে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র কয়েকটা ব্যাংকের পতন ও মধ্যম সারির ব্যাংকগুলো ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অবশ্য সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শত কোটি ডলারের মালিক হেজফান্ড ব্যবস্থাপক বিল অকম্যান এসভিবির সঙ্গে বেয়ার স্টানর্সের তুলনা করেছেন। ২০০৭-০৮ সালে যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট হয়েছিল, তার শুরুতেই ধসে পড়েছিল এই ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান। টুইটারে বিল অকম্যান লেখেন,  একটি ব্যাংকের ব্যর্থতা ও আমানত হারানোর ঝুঁকির জায়গা হলো- এ ধরনের ঘটনা যদি কম সম্পদধারী ব্যাংকে এরপর ঘটে এবং তা ধসে পড়ে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটতে পারে। সিগনেচার ব্যাংকের বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার কথা অনেকটাই মিলে গেল।

 

নগদ টাকার দরকার সুইস ব্যাংকের

ধার নিচ্ছে ৫৪ বিলিয়ন ডলার 

বিশ্বজুড়ে আর্থিক অস্থিরতার মধ্যেই সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস একীভূত হয়েছে আরেক বৃহৎ ব্যাংকের সঙ্গে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে বিশ্বখ্যাত ব্যাংক ক্রেডিট সুইস। ভবিষ্যতে তারল্য সংকটে যেন পড়তে না হয়, সে জন্য ক্রেডিট সুইস আগেভাগে ঋণ নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ক্রেডিট সুইস জানায়, তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে দুর্বলতা আছে। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর ওয়াল স্ট্রিটে ক্রেডিট সুইসর শেয়ারদর ২৪ শতাংশ পড়ে যায়। এ ঘটনার পর সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে জানায়, তারা আর ক্রেডিট সুইস ব্যাংকে বিনিয়োগ করবে না। তাতে বিশ্বের প্রায় সব আর্থিক বাজারেই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়; বড় বড় সূচকের পতন হয়।  সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বলেছে, সুইস ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট সুপারভাইজরি অথরিটি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছে। সে জন্যই এ ঋণ দেওয়া।

 

সর্বশেষ খবর