চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মাহফুজ। পেশায় দিনমজুর। থাকার মতো ছিল একটি টিনশেডের ঘর। কিন্তু বন্যায় যুবকের সেই সম্বলটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এখন তাঁর ঠিকানা খোলা আকাশের নিচে। মা, স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে চার সদস্যের পরিবার। একইভাবে ফটিকছড়ির ভূজপুর থানার নারায়ণ হাট ইউনিয়নের হাঁপানিয়া জমিদার পাড়ার বাসিন্দা কৃষক মুহাম্মদ নুরুল আলম হারান নিজের একমাত্র সম্বল ঘরটি। পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই এখন তার।
এভাবে কেবল মাহফুজ বা নুরুল আলম নন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের অনেক এলাকার মানুষের ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু। আবাসন হারিয়ে এখন তারা দিশাহারা। বন্যায় নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলোর এখন বড় চ্যালেঞ্জ মাথা গোঁজার এতটুকু ঠাঁই। ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়া এসব মানুষের এখন প্রাণপণ চেষ্টা ঘুরে দাঁড়ানোর।
জানা যায়, ফটিকছড়ির বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, সুয়াবিল, সুন্দরপুর, ভূজপুর, হারুয়ালছড়িতে এখন সংকট চলছে আশ্রয়ের। কারও ঘর নেই, কারও খাবার নেই, কেউ দিনপার করছেন অর্ধাহার-অনাহারে। অধিকাংশই হারিয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। ফটিকছড়ির সীমান্তবর্তী ফেনী নদী ঘেঁষা বাগান বাজার ইউনিয়নের ওয়ার্ডের হলুদিয়া, মাস্টার পাড়া, পূর্ব হলুদিয়া, ২৫ নম্বর চা বাগান, আন্ধার মানিক চা বাগান, হাবিবুল্লা চর, নলুয়াটিলা, রহমতপুরসহ এখানকার প্রায় ১২ হাজার পরিবারের।
রক্তদাতা সংগঠন কল্যাণের পরিচালক প্রকৌশলী আরিফ উদ্দিন বলেন, ফটিকছড়ির বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরপুর, নারায়ণহাট, সুয়াবিল, বাগান বাজার ও হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে। সুয়াবিল ও সুন্দরপুরের প্রায় শতভাগ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হারুয়ালছড়িতে পঞ্চাশ শতাধিক এবং নারায়ণহাটের ২ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বা বিধ্বস্ত হয়েছে। তাই এখন তাদের দরকার ঘরবাড়ি মেরামতের সহযোগিতা।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখানে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে ৬০০ ঘর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০০০ এবং উপজেলার ২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া, কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যাপক ক্ষতি হয়।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, চট্টগ্রামে মিরসরাই, ফটিকছড়ি ও সাতকানিয়া উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের ৫৮ হাজার ৪৩৮টি পরিবারের ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব এলাকায় ৪৬২ টন চাল ও নগদ টাকাসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে ১৩৩ টন চাল মজুত আছে। অন্যদিকে কৃষি ও মৎস্য খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের প্রায় নয়টি উপজেলায় বন্যা হয়। এর মধ্যে ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও হাটহাজারী উপজেলা তুলনামূলক বেশি প্লাবিত হয়। গত সোমবার থেকে বন্যা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। তবে ক্রমেই ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। বন্যায় ফটিকছড়িতে তিনজন, হাটহাজারীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন ও রাঙ্গুনিয়ায় পানিতে ডুবে একজন মারা যান।