দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার সাত দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট আদালত তাদের প্রত্যেককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এদিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পৃথক একাধিক আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। এর পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষ জামিন চেয়ে শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার ভাসানটেক থানায় যুবক ফজলুকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় শ্যামল দত্তকে এবং রমনা মডেল থানায় গৃহকর্মী লিজা আক্তারকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় মোজাম্মেল হক বাবুকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক আরও দুটি হত্যা মামলায় শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় রফিকুল ইসলাম ও আরিফ হত্যা মামলার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালত এ দুই মামলায় শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার দেখান। এর পর আইনজীবীর জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টার দিকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুকে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকায় একটি প্রাইভেটকারসহ আটক করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা। এর পর রাত ১১টার দিকে তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয়।
শ্যামল দত্তের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর নিহত ফজলুর ভাই সবুজ বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভাসানটেক এলাকায় বিজয় মিছিল করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফজলু নিহত হন।
মোজাম্মেল হক বাবুর বিরুদ্ধে হওয়া মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর নিহত লিজা আক্তারের বাবা মো. জয়নাল শিকদার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই রমনা থানাধীন এলাকায় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে অনেক মানুষ আহত হন। এ সময় গুলিবিদ্ধ লিজা আক্তার ২২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকালে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকার বউবাজার রোডে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গুলিতে চোখে গুলি লাগে আরিফের। চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরিফের বাবা মো. ইউসুফ যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি নিহত হন।