রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। জানা গেছে, গত ৩ বছরে সম্পর্কের টানাপোড়েন, মানসিক চাপ ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাসহ নানা আর্থ-সামাজিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডজনখানেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ থেকে উত্তরণে যথাযথ কাউন্সিলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি দরকার বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, গত তিন বছরে আত্মহত্যা প্রবণতা ইস্যু নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৮ জন শিক্ষার্থী। মানসিক সমস্যাজনিত কারণে চিকিৎসা নিতে আসে দেড় হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ৭৫৯ জন এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৭৫৯। সমস্যাভেদে ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে অন্তত সাতাশ’ সেশনে কাউন্সিলিং সেবা দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। গত ২০২৩-২৪ সেশনে অনিদ্রা, ড্রাগ ও অনলাইন আসক্তি এবং প্রেমঘটিত সমস্যা নিয়ে প্রায় ৬৫০ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া বিয়ে পরবর্তী সমস্যা ৩৮, উদ্বেগজনিত সমস্যায় প্রায় ১৭৫, বিভিন্ন ফোবিয়ায় ৬৩, যৌন হয়রানি সমস্যায় ২৮, মুড সুইং সমস্যায় ৪২, অতিরিক্ত রাগের সমস্যায় ১১১ এবং একাডেমি চাপ ও এডজাস্টমেন্ট সমস্যায় ৭৭ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাসহ নানাবিধ মানসিক সমস্যা থেকে উত্তরণে উপযুক্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন, দক্ষ জনবল তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ড. কাজী ইমরুল কায়েশ। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অধিকতর মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তিনি। ড. কায়েশ বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে বিভিন্ন সংকট থাকলেও সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে এসেছে। তবে দক্ষ জনবল, উপযোগী অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলে এ কেন্দ্রের কাজের পরিধি বাড়বে।
কমবেশি সবাই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজির আহমেদ তুষার। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাে সংশ্লিষ্টতার উপর তাগাদা দিয়েছেন তিনি। তানজির আহমেদ তুষার বলেন, কমবেশি সবাই মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এজন্য পরিবেশ অনেকাংশে দায়ী। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ঝুঁকি কম থাকে। প্রফুল্লতার অভাবেই মানসিক চাপ বাড়ে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিকমূলক কর্মকাণ্ড বেশি হওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। শিক্ষার্থীদের এই ঝুঁকি নিরসণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সল্প পরিসরে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এটা আরো সম্প্রসারিত করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।