ভারতে রফতানির প্রভাব পড়েনি চাঁদপুর মাছ ঘাটে। এখানকার কোন ব্যবসায়ীই ভারতে ইলিশ রফতানি করছেন না। ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও নদ-নদীগুলোতে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায়, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বড় স্টেশন মাছঘাটের আড়তে বাড়েনি সরবরাহ। চাহিদা বেশি ও সরবরাহ কম থাকায় প্রতি কেজি ইলিশের দাম একটু বেশি। অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রতি কেজিতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি। ফলে আড়তে ক্রেতাদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরবরাহের কারণে বাজারে ইলিশের দাম বেশি বলে ব্যবসায়ীরা জানান। চাঁদপুর মৎস্য আড়তে যেখানে অন্যান্য বছর প্রতিদিন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার মন ইলিশ আসে। সেখানে এবছর ৩০০ থেকে ৫০০ মণ ইলিশ আসছে।
চাঁদপুরে বর্তমানে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২১শ’ থেকে ২৩শ’ টাকা, আর ১ কেজি ইলিশ ১৮শ’ থেকে ১৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ বছরের এই সময় ইলিশ কিনতে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে অনেকেই ভিড় জমান চাঁদপুরে। ইলিশের দাম বাড়েনি, গ্রাহক বেড়েছে, সরবরাহ কম, তাই মনে হয় ইলিশের দাম বেশি।
জেলে লিটন গাজী ও সফিক আকন্দ জানান, নৌকা নিয়ে নদীতে নামলেই জ্বালানি, খরচা ও খাওয়া মিলে ২/৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। এবছর আহরণকৃত ইলিশের সাইজ খুব ছোট। তাদের এমনও দিন যায় ৩/৪ হাজার টাকার মাছ আড়তে বিক্রি করে থাকে। অনেক জেলে এখন বিদেশে ও ভিন্ন পেশায় চলে গেছে। আগে নদীতে ১০/১৫ হাজার টাকার আড়ৎ করতাম, তাতে ভালোভাবেই সংসার চালাতাম। এখন সেই অবস্থা নেই। যেহেতু একটি নৌকায় কমপক্ষে ৬/৭ জন জেলে মাছ ধরার কাজ করতে হয়। পরিবার পরিজন ও কিস্তি নিয়ে এখন কঠিন সময় পার করতেছি।
আড়ৎদার শাহজাহান গাজী ও খলিল শেখ বলেন, ইলিশের জাল, নৌকা তৈরি করতে বেশিরভাগ পুঁজি আড়ৎদাররা বিনিয়োগ করে থাকে। জেলেরা ইলিশ ধরে আনার পর বিক্রির শতকরা ৫ টাকা আড়ৎদার পেয়ে থাকে। এমনও দিন যায় জেলেরা যে পরিমাণ ইলিশ পায় তা বিক্রির টাকা দিয়ে নৌকার জ্বালানি খরচ গিয়ে কিছুই থাকে না। তখন আড়ৎদাররা প্রত্যেক জেলেকে ৪/৫ শ’ করে খরচের টাকা দিতে হয়। তবে আমরা জেলেদের সহযোগিতা করতে পেরে স্বস্তি ও আনন্দ পাচ্ছি।
ক্রেতা শাহ আলম ও সোহেল বলেন, এখানে ইলিশের দাম অনেক বেশি। ১২শ’ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজির দাম ২১শ’ টাকা। ইলিশ মাছ তো চাষ করা লাগে না। দাম কম হওয়ার কথা। দেখছি কম দামে ইলিশ পাওয়া যায় কিনা। এখানের ইলিশ ঢাকা থেকে প্রতি কেজিতে ২/৩ শ’ টাকা বেশি। তবে এখান থেকে ফ্রেশ ইলিশ কেনা যায় এতটুকুই।
চাঁদপুর মৎস্য ও বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার মানিক বলেন, দেশের নদ-নদী গুলোতে নেই কাঙ্ক্ষিত মাছ। চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, হাতিয়া, নোয়াখালী, সন্দীপ সহ দেশের নিম্নাঞ্চল থেকে আসছে না তেমন ইলিশ। তবে সরবরাহ আরও কমে গেলে ইলিশের দাম এমনিতে বেড়ে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল