কক্সবাজারের পেকুয়ায় অপহরণের পর শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফকে গুম করে নির্মমভাবে খুনের ঘটনার অন্যতম হোতা রুবেল খান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার তাকে পেকুয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পেকুয়া হতে অপহরণের শিকার হন পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আরিফ। পরবর্তীতে অপহৃতের মোবাইল থেকে কল করে স্বজনদের নিকট ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও অপহৃতের স্বজনদের নিকট কল করে মুক্তিপণ দাবিকারী হিসেবে রুবেলকে শনাক্ত ও তার বিস্তারিত পরিচয় ও অবস্থানস্থল উদঘাটনে সমর্থ হয় সংস্থাটি।
পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে র্যাব ১৫, র্যাব ১১ ও র্যাব ৭ এর যৌথ আভিযানিক দল র্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখার সার্বিক সহযোগিতায় রুবেলকে গ্রেপ্তারের মিশনে নামে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে তারা। গ্রেপ্তারকৃত রুবেল চাঁদপুর সদর উপজেলার চরপুরচণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ খানের জ্যেষ্ঠ ছেলে।
অভিযানের অন্যতম নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন র্যাব ১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। তিনি জানান, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত রুবেল অন্যতম। এই রুবেলই সরাসরি অপহৃতের স্বজনদের নিকট অপহৃতের মোবাইল থেকে দফায়দফায় কল দিয়ে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ ছাড়া অপহরণের আগে প্রধান শিক্ষক মো. আরিফের গতিবিধির উপর দীর্ঘদিন যাবত নজরদারিও করেন রুবেল।
র্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর রুবেল এই হত্যাকাণ্ড ও মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অকপটে স্বীকার করেন। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য অপরাধীকেও শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে মর্মেও জানান তিনি। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত রুবেল আর কী কী তথ্য দিয়েছেন- জানতে চাইলে তদন্তের স্বার্থে এ প্রসঙ্গে এখনই আর কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এ র্যাব কর্মকর্তা।
অপহরণের ১৪ দিনের মাথায় গত শুক্রবার মো. আরিফের বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে বস্তাবন্দী গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রুবেলকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কক্সবাজারের পেকুয়া থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেছে র্যাব।
এদিকে খুনের শিকার শিক্ষক আরিফের ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া শেষে শনিবার বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। এর পর সন্ধ্যার দিকে পেকুয়া সদরের স্টেডিয়াম মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে দাবি করা হয়- পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমই শিক্ষক আরিফ হত্যাসহ লাশ গুমের মূল পরিকল্পনাকারী। তার একাধিক ভাইসহ সাঙ্গপাঙ্গোরাই জমির বিরোধ নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে শিক্ষককে অপহরণের পর চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের বাড়িতেই টর্চার সেলে রাখা হয়। সেখানে ঝুলিয়ে রেখে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দী করে শিক্ষক আরিফেরই বাড়ির পুকুরে ফেলা হয়। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরদের বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ হত্যাকাণ্ডের নানা আলামত জব্দ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
অপরদিকে শিক্ষক আরিফ হত্যায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ও তার একাধিক ভাইয়ের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষিপ্ত জনতা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। বর্তমানে এসব বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল