ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। এরপর থেকে মাঠ পর্যায়ে আগের মত সক্রিয় হতে পারেনি অইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সুযোগে ঝিনাইদহে বেড়েছে কিশোর অপরাধ। শুধু জেলা শহরেই নয় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাঁরা।
ফলে একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ,ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, এসব কিশোর অপরাধীদের পেছন থেকে মদদ দিচ্ছেন কতিপয় রাজনৈতিক নেতারা। যাঁরা তাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে।
সচেতন নাগরিক সমাজের ধারণা, চলমান পরিস্থির পর স্কুল-কলেজগামী অনেক কিশোরেরা ক্লাসে ফিরে না গিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধে। অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে বিপথগামী কিশোররা মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি ছিনতাইয়ের মত অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট কালীগঞ্জ শহরের বিহারী মোড় এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে যায় ৫ কিশোর। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। একই দিন ঝিনাইদহ শহরের কোটপাড়ার একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হয় দুই কিশোর।
৮ আগস্ট শৈলকুপা শহরের এক ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে ৭ থেকে ৮ জনের সংঘবদ্ধ একদল কিশোর। এর আগে শৈলকুপার বাহির রয়েড়া গ্রামের এক হিন্দু ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করে দুই কিশোর।
গত একমাসে মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর অপরাধীদের হাতে অনেকে আহত হয়েছেন। সন্ধ্যার পরপরই উঠতি বয়সি কিশোররা বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে পথচারীদের মোবাইলসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে অবাধে পালিয়ে যাচ্ছে। গত তিন বছরে কিশোর অপরাধীদের হাতে অন্তত ৬ জন খুন হয়েছেন।
মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘গত সরকারের আমল থেকে কিশোরদের গ্যাং কালচার বা সংঘবদ্ধ অপরাধের ভয়ঙ্কর চিত্র সামনে এলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ফলে কিশোর অপরাধের প্রবণতা কমেনি, বরং বেড়েছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার অভাব, তাদের হাতে দামী মোবাইল আর এসব মোবাইলে প্রযুক্তির অপব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতাতা কিশোরদের বিভিন্ন অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়াও মফস্বলে অভিভাবকদের অসচেতনতায় কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে, আসক্ত হচ্ছে নেশায়। তাঁরা নেশার টাকা জোগাড় করতে পা বাড়াচ্ছে অপরাধ জগতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক পদক্ষেপ ছাড়া কিশোর অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অভিবাবক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ইমাম-পুরোহিতসহ সকলকে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা কমিটির সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘সম্প্রতি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। গত কয়েকমাসে জেলার বিভিন্ন এলাকার চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে বলে জেনেছি। কিশোর অপরাধ নিয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ঝিনাইদহে ভবিষ্যতে সামাজিক নৈরাজ্যসহ ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।’
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, ‘কিশোর অপরাধ নিয়ে আমরা বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আশা করছি খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান ঘটবে।’
বিডি প্রতিদিন/আশিক