শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার করার ইবাদত হজ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার করার ইবাদত হজ

 হজ পালনে কাবার দিকে ছুটছে সারা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের হাজিরা। কেউ উড়োজাহাজে চড়ে, কেউ নৌযান করে কিংবা সড়ক পথে ছুটছেন কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে।

হজ এমন এক ইবাদত যা বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে জোরদার করে। সব মানুষ আদম-হাওয়ার সন্তান এবং আল্লাহর বান্দা এই সত্য তুলে ধরে। বছরে নির্দিষ্ট সময় মক্কা ও এর আশপাশের পবিত্র স্থানগুলো গমন, নির্দিষ্ট ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের নাম হজ। এটা এমন এক ইবাদত যাতে শরীর, মন ও আত্মা সব একসঙ্গে অংশ নেয়। প্রত্যেক সামার্থ্যবান মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ। হজের সামর্থ্যের জন্য বড় ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। মক্কা পর্যন্ত ভ্রমণ এবং থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত অর্থ ও ওই সময়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ থাকলেই বুঝতে হবে হজের সামর্থ্য আছে। জীবনে সুস্থ-সবল থাকতে থাকতে হজ করাতে রসুল (সা.) উৎসাহিত করেছেন। কারণ, এর আনুষ্ঠানিকতা রুগ্ন ও বৃদ্ধ অবস্থায় পালন করা কষ্টকর। রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ঠিকভাবে হজ পালন করে তার পুরো জীবনের গুনা মাফ হয়ে যায়। হজ শুধু পবিত্র স্থানে গমন নয়। ভ্রমণের চেয়ে অনেক গভীর এর তাৎপর্য। হজের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এটা যে শুধু মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকে চালু তা নয়। এটা ইবরাহিম (আ.)-এর সময় থেকে চালু হয়েছে। হজের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও এর আর্থিক, নৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে। হজ পালন মুসলিমের আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি সমর্পিত ও অনুগত হতে শিক্ষা দেয়। মানুষকে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মিশন স্মরণ করিয়ে দেয়! মানুষকে তার মৃত্যু, পুনরুত্থান ও জবাবদিহিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। সারা দুনিয়ার মুসলমানের ভ্রাতৃত্বকে জোরদার করে। হজে সবার পরনে এক পোশাক যা গোত্রবর্ণ, ধনীনির্ধন ইত্যাদির ভেদ দূর করে। মুসলিম বিশ্বের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মতো। যেখানে নিজেদের মতামত ও ভালোবাসা বিনিময় করা যায়। ইবরাহিম (আ.) তাঁর নির্বাসিত পরিবারকে দেখতে অন্তত দুবার মক্কা গিয়েছিলেন। প্রথম ঘটনায় সুরা বাকারার ১২৭-১২৯ নম্বর আয়াতে দেখা যায় ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.) একসঙ্গে কাজ করে এক আল্লাহর প্রথম ইবাদতগাহ ‘কাবাঘর’ নির্মাণ করেন। তারা দুজন এই ঘরের জন্য দোয়া করেন। সেই শহরের জন্য দোয়া করেন।    তাদের দোয়ার ফলেই ওই শহর থেকে শেষ নবী (স.)-এর আবির্ভাব। দ্বিতীয় ঘটনা হচ্ছে ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি। এ ব্যাপারে সুরা সফ্ফাতের ৯৯-১১৩ নম্বর আয়াতে দেখা যায়, আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে আদেশ করলেন। ইবরাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে স্বপ্নাদেশের কথা বললে তিনি আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে সানন্দে  রাজি হয়ে যান। ইবরাহিম (আ.) পুত্রকে নিয়ে কোরবানি করতে মিনা নামক স্থানে যান। পথে শয়তান তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ইবরাহিম ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হন। ওই সময় আল্লাহর ফেরেশতা একটি দুম্বা নিয়ে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর ত্যাগের ইচ্ছা কবুল করেছেন। পুত্রের বদলে দুম্বা কোরবানি দিতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। ইবরাহিম (আ.) তখন আল্লাহর আদেশ পালন করেন। এ ঘটনার স্মরণে এখনো হাজীরা মিনায় পশু কোরবানি দেন। আল্লাহর এ আদেশ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে।  আল্লাহ ওই আদেশের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন, আল্লাহর আদেশকে মানুষের আবেগ, যুক্তি ও মানবীয় জ্ঞানের ঊর্ধ্বে কীভাবে স্থান দিতে হয়।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর