বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা

মানবশিশু জন্মগ্রহণ করেই কেঁদে ওঠে। আহা! কত অসহায় থাকে সে তখন। খাওয়া-পরা, প্রস্রাব-পায়খানা কিছুই বলতে পারে না মুখ ফুটে। একদিন হঠাৎ কচিমুখে ভাষার ফুল ফোটে। মা-বাবা-দাদা...। সেই শুরু কথা বলা। জীবনভর চলে কথার খেলা। এই যে কথা বলা, কে শেখালেন এ খেলা? তিনি আমাদের আল্লাহ। কোরআনের ভাষায় ‘পরম দয়াময় আল্লাহ। যিনি কোরআন শিখিয়েছেন এবং মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে শিখিয়েছেন কথা বলার জাদু। শিখিয়েছেন ভাষা।’ (সূরা আর-রাহমান : ১-৪)। দয়াময় প্রভু দয়া করে আমাদের ভাষা শিখিয়েছেন, কথা বলা শিখিয়েছেন। আমাদের অবশ্যই কর্তব্য হলো ভাষার শুকরিয়া ও কথা বলার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। ভাষার শুকরিয়া আদায় করতে হলে প্রথমেই আমাদের ভাষাকে ভালোবাসতে হবে। মনেপ্রাণে ভাষার প্রেমকে লালন করতে হবে। একজন সন্তান যেমন মায়ের সম্মান ও জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে জীবনও দিতে পারে, তেমনি মায়ের ভাষার সম্মান ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্যও আমাদের জীবন উৎসর্গ করতে হবে। এ প্রেম আমরা নবী (সা.) এর জীবনেও দেখতে পাই। তিনি বলেছেন, ‘আমি আরবিকে ভালোবাসি। মনেপ্রাণে ভালোবাসি। কারণ, আরবি আমার মায়ের ভাষা।’ আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা। বাংলাকেও আমাদের ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের গভীর থেকে। যেমন ভালোবেসেছিলেন রফিক-সালাম-বরকতরা। ভাষাকে যখন ভালোবাসব তখনই হৃদয় জমিনে ভাষার ফুল ফুটবে। সেই ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়বে কলমের কালি হয়ে। অর্থাৎ, আমাদের কলমে তখন ঐশী প্রেরণা আসবে। যা লিখব তাই হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত, জীবন্ত। সমাজ ও দেশের জন্য উপকারী। ভাষার শুকরিয়া আদায়ের দ্বিতীয় মাধ্যম এটি। কলমসাধক হওয়া। আনন্দের কথা হলো, অনেক পরে হলেও আমাদের ধর্মদরদিরা ভাষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। মাদ্রাসাগুলোয় ভাষা ও সাহিত্যের সবক জোরেশোরে শুরু হয়েছে। মাদ্রাসাপড়ুয়ারা গল্প-উপন্যাস পড়ছেন-লিখছেন। সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন মাদ্রাসাপড়ুয়ারাই সাহিত্যের ময়দানে বুক ফুলিয়ে হাঁটবেন।

এখনো অনেক মাদ্রাসার বাগানে সাহিত্যের ফুল ফোটেনি। মাদ্রাসার মুরব্বিরা সাহিত্যের গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। সাহিত্যচর্চাকে ধর্মের কাজ মনে করছেন না তারা। এদের উদ্দেশে বলছি। প্রিয় ভাই! আমাদের কোরআন কি সাহিত্য-সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থ নয়? প্রিয় নবীর (সা.) হাদিসগুলো কি উঁচুমাপের সাহিত্যে পড়ে না? প্রতিটি হাদিসের গদ্য এবং অনন্য ছন্দের সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। শুধু কি তাই। নবী (সা.)সহ প্রত্যেক সাহাবিই ছিলেন স্বভাবকবি। অনেকবারই তিনি আবু বকর-আলী-হাসসান ইবনে সাবিতের কবিতার ছন্দ ঠিক করে দিয়েছিলেন। এগুলো এজন্য বলছি, নবী (সা.) সাহিত্যকে কত গুরুত্ব দিয়েছেন তা যেন আমরা বুঝতে পারি।

একুট আগেই বলেছি, নবী (সা.) আরবিকে ভালোবাসতেন। তাঁর সামনে কেউ অশুদ্ধ ভাষায় কথা বললেও তিনি তা ভালো চোখে দেখতেন না। আর ভুল কবিতা বা গদ্য আওড়ালে তো কথাই নেই, সঙ্গে সঙ্গে দরদি ভাষায় শুধরে দিতেন। আবার কেউ সুন্দর কবিতা বললে তাকে উৎসাহ দিতেন। একবার হাসসানের কবিতায় মুগ্ধ হয়ে তিনি নিজের চাদর তাকে উপহার দেন। এভাবে নবীজীবনের বাঁকে বাঁকে সাহিত্যপ্রেম, ভাষাপ্রেম ফুটে ওঠে।

 

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর