মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার ♦ যশপাল শর্মা

এখানকার পাখিও বাংলায় কথা বলে

টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় নির্মাতা তৌকীর আহমেদ তৈরি করছেন চলচ্চিত্র ‘ফাগুন হাওয়ায়’। এই ছবিতে চমক হিসেবে নির্মাতা কাস্ট করেছেন বলিউড অভিনেতা যশপাল শর্মাকে। যাকে পাকিস্তানি পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেখা যাবে। ‘ফাগুন হাওয়ায়’ অভিনয় ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আলাপনে—পান্থ আফজাল

এখানকার পাখিও বাংলায় কথা বলে

আরে... আমাকে ঘুম থেকে ডাক দিলেই তো হতো...। তাহলে অনেক আগেভাগেই দেখা হতো! কি আর করা! ঠিক আছে, বসুন।

আচ্ছা, কেমন আছেন আপনি?

হুম...ভালো আছি।

বাংলাদেশে তো প্রথমবার। সবমিলিয়ে কেমন লাগছে?

হুমম... প্রথমবারই তো এসেছি। ইটস গ্রেট! আমি যে বলার জন্যই শুধু বলছি তা নয়, আমি সত্যি এটা অনুভব করছি। মনে হয়, এ ছবিটি ভালো একটি ছবি হতে যাচ্ছে। আর আমি খুবই খুশি যে, সুন্দর একটি ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি।

বাংলাদেশি অভিনেতা-অভিনেত্রী সম্পর্কে আগে থেকেই জানা আছে?

তেমন করে নয়! তবে আমি শুধুই জেনেছি তিশা, বাবু আর সিয়াম সম্পর্কে। জানা মতে, এই মানুষগুলো অভিনয়ে দুর্দান্ত!

বাংলাদেশি তেমন কোনো ছবি দেখা হয়েছে?

আমি দুটি ছবি দেখেছি—তৌকীর আহমেদের ‘হালদা’ আর ‘অজ্ঞাতনামা’। অজ্ঞাতনামা‘তে অভিনীত অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে এ ছবি দুটি দেখার পর আমি তিশা আর বাবুর ভক্ত হয়ে গেছি। আমার প্রিয় পরিচালকের নাম কিন্তু ইরানের মাজিদ মাজিদী। তাই ‘হালদা’ আর ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবি দুটি নির্মাণের মুন্সিয়ানার জন্য আমি তৌকীরকে বাংলাদেশের ‘মাজিদ মাজিদী’ বলব।

অভিনয়ের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ হয়?

কলকাতার কয়েকজন তৌকীর সম্পর্কে বলেছিল। তার মধ্যে একজন এডিটর অমিত দেবনাথ আর আরেকজন আমার সিনিয়র অমিত ব্যানার্জি। আসলে নিমার্তা আমার মধ্যে পাকিস্তানি লুক খুঁজে পেয়েছিল বলে আমার ধারণা।

ছবিটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের আবহে নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন বিষয়ে আপনি কতটুকু জানেন?

এ ছবিটি করতে গিয়ে তৌকীর ১৯৫২ সালের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকে দেখিয়েছে। তৌকীর এই চ্যালেঞ্জিং বিষয়টা নিয়ে ছবি করছে। আসলেই সে গ্রেট! আমি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন বিষয়ে বই পড়ে আর ইউটিউব দেখে জেনেছি। ভাষা নিয়ে এত বড় আন্দোলন আমার জানা মতে পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা কিংবা দেশে-দেশে লড়াই হয়েছে অন্য ইস্যু নিয়ে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর ভারতের কার্যক্রম সম্পর্কে আমি জেনেছি। আমি ‘মুক্তি’ নামক শর্টফিল্মে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।

ছবিতে আপনার অভিনীত চরিত্র ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

এ ছবিতে আমার চরিত্রের নাম জমসেদ, যে কিনা পাকিস্তানি। জিন্নাহ সরকার জমসেদকে পুলিশ হিসেবে বাংলাদেশে নিয়োগ দেয়। জিন্নাহ চেয়েছিল সর্বত্র উর্দুকে ব্যবহার করতে আর বাংলা ভাষাকে বন্ধ করতে। কেউ যাতে বাংলায় কথা বলতে না পারে তাই আদেশ ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এখানকার পাখিও বাংলায় কথা বলে—‘বউ কথা কও, বউ কথা কও...’। আর জমসেদের হতাশা এটাই ছিল যে, যখন পাখির ভাষাকেই আমি চেঞ্জ করতে পারছি না, তখন এই বাঙালিদের ভাষাকে কিভাবে আমি চেঞ্জ করব? তখন জিন্নাহ সরকারকে সে চিঠি লিখে পাঠায় যে, ‘প্লিজ মেক অ্যা রুল ইন বাংলাদেশ দ্যাট, এভরি বার্ড, এভরি এনিমেল মাস্ট স্পিক ইন উর্দু!’

নির্মাতা হিসেবে তৌকীর আহমেদ কেমন?

তৌকীর খুবই ভালো একজন নির্মাতা। খুবই জানা-বোঝা একজন লোক। যখন আমি হাতে স্ক্রিপ্ট পাই তখন সেটি পড়ে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যাই। একি পড়লাম আমি! আসলেই এটি একটি ব্রিলিয়েন্ট গল্পের ব্রিলিয়েন্ট ফিল্ম। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন একটি বড় ইস্যু। তৌকীর অনেক চৌকসের সঙ্গে গল্পটি ভেবেছেন। সিরিয়াস বিষয়কে তিনি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করার সাহস দেখিয়েছেন। আমি মনে করি, তার নির্মিত এই ছবিটি ফিল্মজগতে ভালো একটি সাড়া ফেলবে।

অভিনয় করতে গিয়ে ভাষাগত কোনো সমস্যায় পড়তে হয়েছে?

আমি মনে করি, ‘সিনেমা হ্যাজ নো ল্যাঙ্গুয়েজ’। এ ছবিটিতে আমার সহশিল্পীরা অনেক হেলপফুল ছিল।

বাংলাদেশি ফিল্ম আর মুম্বাই ফিল্মের মধ্যে প্রধান পাথক্য কি?

তেমন কোনো পাথক্য নেই। বাংলাদেশি ফিল্ম হলো ‘লো বাজেট ফিল্ম’। এদের সবসময় মার্কেটে ফাইট করতে হয়; ফাইট করতে হয় তাদের আলাদা পরিচিতির জন্য। পার্থক্য শুধুই বাজেটে, অন্য কিছুতে নয়।

সর্বশেষ খবর