কয়েকটি বিদেশি পত্রিকা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও তাদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রশংসা করে প্রতিবেদন ছেপেছে। ওইসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- বলিউড বা হলিউড কিংবা অন্য কোনো দেশের চলচ্চিত্র অনুকরণ না করে বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা গল্প বলার ক্ষেত্রে নিজস্ব ভঙ্গি তৈরি করেছেন। পত্রিকাগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ডেইলি স্ক্রিন’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর শিরোনাম ছিল- ‘বাংলা চলচ্চিত্রের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে।’ এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা ভিন্ন আঙ্গিকে গল্প বলছেন। দিন বদলের আলো জ্বালাতে শুরু করেছেন। পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদনে তরুণ চলচ্চিত্রকারদেরও প্রশংসা করে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দিন বদলের হাতিয়ার এখন তাঁদেরই হাতে।’ আসলে নব্বই দশকের শেষভাগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা, পাইরেসি ও নকলের কালো মেঘে ছেয়ে গেলে চরম দৈন্যদশায় পতিত হয় এদেশের চলচ্চিত্র। দর্শক হয় সিনেমা হলবিমুখ। মানসম্মত ছবির অভাবে দর্শক-খরায় সিনেমা হল পড়ে চরম লোকসানের কবলে। ওই সময় থেকে মাঝেমধ্যে দু-একটি ভালো ছবি মুক্তি পেলেও তা ছিল সিনোমা হল টিকিয়ে রাখার জন্য অপ্রতুল। ফলে প্রচণ্ড খরায় অল্পস্বল্প ভালো ছবি চলচ্চিত্র দুনিয়ায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারেনি। এতে শুরু হলো চরম লোকসানে সিনেমা হল বন্ধের মতো নেতিবাচক অধ্যায়। প্রায় ১ হাজার ৪০০ সিনেমা হলের মধ্যে বর্তমানে নিয়মিত চালু আছে অর্ধশতের মতো সিনেমা হল। এভাবেই খুঁড়িয়ে চলার পথে আবার ২০২০ ও ২০২১ সালে চলচ্চিত্র জগতের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় বৈশ্বিক মহামারি করোনা। তবে সুখের কথা হলো, একটি প্রবাদ আছে- ‘রাতের অন্ধকার যতই গভীর হতে থাকে ভোরের উজ্জ্বল আলো ততই কাছে আসতে থাকে’। হলোও তাই। ২০২২ সাল থেকে আমাদের চলচ্চিত্র দুনিয়া দীর্ঘ খরা কাটিয়ে আবার সফলতার আলো দেখতে শুরু করেছে। ওই বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমে ঝলক দেখায় দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-টু’ ছবিটি। এটি দেখতে সিনেমা হলে দর্শক আবার ভিড় জমায়। এর পরের চিত্র আরও সুখকর। এ বছর মুক্তি পায় মোট ৫৯টি ছবি। অশ্লীলতার পর যেখানে বছরে ছবি মুক্তির সংখ্যা ৪০-এর নিচে নেমে এসেছিল সেখানে এ সংখ্যাটিও চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ইতিবাচক বটে। কারণ সত্তর ও আশির দশকে বছরে প্রায় ১০০ মতো ছবি মুক্তি পেত। এ বছর দারুণ সাড়া জাগায় তিনটি ছবি। এগুলো হলো- হাওয়া (আয় ১৪ কোটি), পরাণ (আয় ১২ কোটি) এবং গলুই (আয় ১ কোটি ৯০ লাখ)। এছাড়া এ বছর সফল হওয়া ছবির তালিকায় রয়েছে- শান, তালাশ, দিন দ্য ডে, যাও পাখি বলো তারে প্রভৃতি। ২০২৩ সালে মুক্তি পায় ৫১টি ছবি। এরমধ্যে আয়ের শীর্ষে ছিল প্রিয়তমা ছবিটি। সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ছবিটি আয় করে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। এরপর ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে রয়েছে প্রহেলিকা। তাছাড়া গড়পড়তা ভালো ব্যবসা করেছে- জ্বীন, লোকাল, লিডার আমিই বাংলাদেশ, ক্যাসিনো ও ১৯৭১ এর সেইসব দিন। ২০২৪ সালে মুক্তি পায় ৫৩টি ছবি। এরমধ্যে অসাধারণ ব্যবসা করে তুফান ছবিটি। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ছবিটি আয় করে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। এরপর রাজকুমার আয় করে ২৬ কোটি, দরদ ১০ কোটি ২০ লাখ, দেয়ালের দেশ ২ কোটি এবং ওমর ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ বছর আলোচনায় থাকে কাজলরেখা ও লিপিস্টিক ছবিগুলো। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৪টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে আয় ও দর্শকপ্রিয়তার দিক দিয়ে রীতিমতো ইতিহাস তৈরি করেছে ‘বরবাদ’ ছবিটি। ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ছবিটি এখন পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে। এখনো সগৌরবে চলছে এটি। এরপর জংলি, চক্কর-৩০২ ও জ্বীন-৩ সন্তোষজনক ব্যবসা করে যাচ্ছে। এতে সিনেমা হল মালিকরা এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। অনেক দিন পর তারা উল্লেখ করার মতো লাভের মুখ দেখছেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে নিয়মিত এমন ছবিই চাচ্ছেন। তারা বলছেন, তাহলে মৃতপ্রায় ও দৈন্যদশায় পতিত সিনেমা হলগুলোকে তারা আবার চাঙ্গা করে তুলবেন। বিশেষ করে দেশের সিনেপ্লেক্সগুলো যেখানে বাংলা ছবি প্রদর্শনে আগ্রহ দেখাত না তারাই এখন বাংলা ছবি চালিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে এবং আরও বেশি করে মানসম্মত বাংলা ছবি আশা করছে। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, করোনা মহামারির পর থেকে মানসম্মত ছবি পেয়ে বাংলা ছবির দর্শক প্রচুর বেড়েছে। তাই এখন আমরা দেশের ছবির ওপর আস্থা রাখতে পারছি। এ কারণে দেশে সিনেপ্লেক্সের সংখ্যাও বাড়াচ্ছি। আসলে এখন আমাদের দেশের ছবির কোয়ালিটি অনেক উন্নত হয়েছে। বলা যায়, বিশ্বমানের ছবি নির্মাণ হচ্ছে এখানে। শহর ও গ্রামের যেসব সিনেমা হলে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই সেখানেও দর্শকের ভিড় বাড়ছে। তাই দর্শক ধরে রাখতে মানসম্মত ছবি ও সিনেমা হলের সংস্কার এখন জরুরি। বিশেষ করে দুই ঈদে বেশি মানসম্মত ছবি পাওয়া যায়। এ ধরনের ছবি সারা বছর পেলে সিনেপ্লেক্সে নিয়মিত দেশীয় ছবি প্রদর্শনে আমাদের আর কোনো বাধা থাকবে না। এতে দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন আবার স্থায়ী হবে।
শিরোনাম
- নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য
- কে এই রাফাল ধ্বংসকারী পাকিস্তানি নারী পাইলট আয়েশা?
- আফগানদের জন্য অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা বাতিল করলেন ট্রাম্প
- শেখ হাসিনাকে যেভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, জানালেন দুদক চেয়ারম্যান
- ভারতের অরুণাচলের ২৭ জায়গার নতুন নামকরণ করল চীন
- বিচারপ্রার্থীদের সেবা সহজ করতে এবার সব আদালতে পৃথক হেল্পলাইন
- শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
- দোকানের কর্মচারীদের ব্যস্ত রেখে ১০০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে চম্পট পাঁচ নারী
- মোংলা বন্দরে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ
- মারামারির মামলায় ছেলেকে পুলিশে দিলেন বাবা
- ক্ষতিগ্রস্ত তিন রিকশাচালককে ডিএনসিসির অনুদান ও চাকরির আশ্বাস
- প্রচণ্ড তাপদাহের পর কুড়িগ্রামে বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি
- মুস্তাফিজের আইপিএল অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা!
- জাপানে সামরিক প্লেন বিধ্বস্ত
- ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ জায়গায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে’
- আরব আমিরাতের উদ্দেশে দেশ ছাড়ল টাইগাররা
- সাম্যের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম, দোষীদের ফাঁসির দাবি
- জুলাই অভ্যুত্থান: জাতিসংঘের রিপোর্টকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে সংরক্ষণে রুল
- দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের
- সাম্য হত্যা : ঢাবিতে বৃহস্পতিবার শোক, অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ