চ্যানেল আই-এর জনপ্রিয় টকশো ‘তৃতীয় মাত্রা’র উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। দেশের প্রথম টকশোটির পরিকল্পক ও পরিচালক এ নন্দিতজন। ২১ বছর ধরে চলমান রাজনৈতিক এ টকশোটিতে সাহসী সঞ্চালনা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল
এ দেশের গণতন্ত্র ও জনসচেতনতামূলক অবস্থানে তৃতীয় মাত্রার সাহসী ভূমিকা নিয়ে বলবেন কি?
তৃতীয় মাত্রা সাহসী ভূমিকা পালন করল কি করল না সেটা বিচার করবে বাংলাদেশের জনগণ, আমার দর্শকশ্রোতারা। কাজেই এ বিষয় নিয়ে আমি নিজে কিছুই বলতে চাই না। তবে আমার যেটুকু বলার আমি চেষ্টা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি পেশাদারিত্বের সঙ্গে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করার জন্য এবং অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গে; সেই সঙ্গে একটা আনকম্প্র্রোমাইজিং অ্যাটিচিউড নিয়ে সবসময় আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের প্রোগ্রামটা করতে। সম্ভবত সে কারণেই বাংলাদেশের মতো একটা বিভাজিত রাজনৈতিক সমাজে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রতিদিন ৩৬৫ দিন বছরে একটানা ২১ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। আমি মনে করি, এইটা একটা বড় সাফল্য আমাদের এবং নিঃসন্দেহে এইটা বিশ্বাস করতেই চাই যে, বাংলাদেশের জনগণ বা টেলিভিশনের দর্শকরা তৃতীয় মাত্রাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন।
টানা প্রতিদিন কীভাবে একটি রাজনৈতিক শো চালু রাখলেন?
প্রতিদিন তৃতীয় মাত্রা কীভাবে চালু রাখলাম এর একটা কারণ হলো পেশাদারিত্ব। আর বাকিটা তো আমি বললামই, যে কারণে অনুষ্ঠানটা টিকে আছে সেগুলো এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। আর পেশাদারিত্বের কারণে জানেন যে, ৩৬৫ দিন অনুষ্ঠানটা বিরতিহীনভাবে এত বছর ধরে চলছে ২০০৩ সালের ১৭ জুলাই থেকে। এবং আমার ব্যক্তিজীবনের কোনো সংকট তৃতীয় মাত্রাকে কখনোই স্পর্শ করেনি। এটা সবাই জানেন যে, আমার পরিবারের ওপর দিয়ে অনেক ধরনের দুর্যোগ গেছে। আমার বাবা, মা, বোন, সন্তান মারা গেছেন। আমি কবরস্থান থেকে গিয়েও অনুষ্ঠান করেছি। এতে অনেকেই আমাকে অমানবিক বলেন, কিন্তু আমি একজন অত্যন্ত ফ্যামিলি পারসন। পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিবিড়। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত কারণে দর্শকদের যে প্রত্যাশা একটা অনুষ্ঠানের প্রতি বা একটা গণমাধ্যমের প্রতি সেটা কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হোক বা ব্যাহত হোক তা আমি কখনো চাইনি। তাই আমি মনে করি যে এই ডেডিকেশন, এই প্রফেশনালিজম- এগুলোই সাহায্য করেছে আর দর্শকদের ভালোবাসা নিঃসন্দেহে একটা বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
অতীত ও বর্তমান কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
অতীত-বর্তমান যদি আমার এ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বলেন তাহলে বলব আমরা যা ছিলাম তাই আছি, ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবে। একই ভূমিকায় থাকব। তৃতীয় মাত্রার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। সরকারকে প্রশ্ন করা, চ্যালেঞ্জ করা, প্রথা প্রতিষ্ঠানকে- এটাই আমাদের কাজ। কাজেই এটা অব্যাহত থাকবে। আর দেশের কথা যদি বলেন নিঃসন্দেহে অন্তত ১৫ বছর পর তো বটেই বাংলাদেশের মানুষ মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছে এবং একটা নতুন যাত্রা। এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে কি থাকবে না সেটা নির্ভর করবে যারা এখন দেশ পরিচালনা করছেন বা সামনে যারা করবেন তাদের ওপর। তবে নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে কিন্তু আমি মনে করি একটা নতুন যাত্রা শুরু, ফ্রেশ বিগেনিং। আমরা চাইলে সবাই মিলে দেশটাকে নতুনভাবে সাজাতে পারব। তবে বাংলাদেশের একটা বড় পরিবর্তন যেটা ঘটে গেছে এই জুলাই আন্দোলনের মধ্যে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ এখন কাউকে, কোনোকিছুতেই ভয় পায় না। এটা একটা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশ নিয়ে আগামীর প্রত্যাশা কী?
দেশ নিয়ে যে কোনো নাগরিকের, দেশপ্রেমিক নাগরিকের একটাই প্রত্যাশা- দেশটা সুন্দর হোক। দেশের মানুষ সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক। যেকোনো অন্যায়ের প্রতিকার মানুষ পাবে, সেটা প্রত্যেকের প্রত্যাশা। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক সেটা আমাদের সবার আগে চাওয়া। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা থাকুক, জবাবদিহিতা থাকুক, গণতন্ত্র থাকুক। আমি যেন নির্ভয়ে কথা বলতে পারি।
অবশ্যই কথা বলার সময় আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। তবে সেটা যেন আইন দ্বারা নির্ধারিত না হয়। আমার মূল কথা হলো, আমরা যেন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারি এবং দেশের মানুষের অর্থনৈতিক জীবন যেন স্বাচ্ছন্দ্যের হয়, স্বস্তির হয়। বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে যেন একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, জনসংখ্যার বিচারে পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম একটা দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। কাজেই কোনো বিবেচনা থেকেই বাংলাদেশ খুব ছোট একটা দেশ না। আর দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী কিন্তু তরুণ। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সম্পদ। এদেশের তরুণরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। অনেক মেধাবী তরুণ রয়েছে। তাই আমি একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। কিন্তু সবটাই নির্ভর করবে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, ত্যক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন কিন্তু যে অভিজ্ঞতা জুলাই-আগস্টে হলো সেখান থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করবেন। তবে আমি আশা করি, আগামীতে আমাদের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।