থামছেই না পিটিয়ে হত্যার উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল চুরির অভিযোগে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে পিটিয়ে মেরেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাতে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, বুধবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে মারা গেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লা। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ ছাত্রদলের পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা : বুধবার দুপুরে ফজলুল হক হলের মাঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ক্রিকেট খেলা চলাকালীন ৬টা মোবাইল চুরি হয়। পরবর্তীতে খেলা চলাকালীন ৮টার দিকে তোফাজ্জল হলে ঢুকলে তাকে আটক করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের ধারণা, তোফাজ্জলই মোবাইল চুরি করেছে। তাকে গেস্টরুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মারধর করেন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। পরবর্তীতে তাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে আবারও গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গেস্ট রুমে তোফাজ্জলের হাত বেঁধে মারা হয়। একপর্যায়ে তোফাজ্জল পড়ে যায়। এর পর তাকে পানি খাওয়ানো হলে সে উঠে বসে। এ সময় সবাই হাততালি দেয়। এর পর আবার শুরু হয় পেটানো। এ সময় গ্যাস লাইট দিয়ে তোফাজ্জলের পায়ে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তোফাজ্জলের ভ্রু ও চুল কেটে দেওয়া হয়। মারধরে তোফাজ্জলের ডান পা এবং বাম পায়ের মাংস থেঁতলে যায়।
থানায় মামলা, আটক ৬ : হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় অভিযোগটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
সাত সদস্যর তদন্ত কমিটি : এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে ফজলুল হক মুসলিম হল প্রশাসন সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও রাত পর্যন্ত তা জমা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, প্রতিবাদ : নির্মম এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১০টায় নিপীড়ন মুক্ত শিক্ষার্থী সমাজ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারেও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
হত্যার আগে মুক্তিপণও চাওয়া হয়েছিল : এদিকে আমাদের পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, তোফাজ্জল হোসেনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখার পর তার ভাবী ও মামার কাছে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। তোফাজ্জলের ভাবি লতিফা বেগম বলেন, বুধবার রাত ১০টা ২ মিনিটের ০১৩১০৭৯০৩৭২ নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে তোফাজ্জকে দিয়ে কথা বলায়। তোফাজ্জল বলে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ধরেছে, মারধর করছে, টাকা চায়।
গণপিটুনিতে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার গেট ভেঙে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধরা। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ ছাত্রদলের পাঁচজনকে শনাক্ত করা গেছে। শামীম সাভারের আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার মোল্লাবাড়ির ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯ ব্যাচ) ইতিহাসের বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস : এদিকে এ ঘটনায় বুধবার রাত থেকেই উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শামীম মোল্লার ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রাত ২টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
আট শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, হবে মামলা : হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আট শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।