শেখ হাসিনা তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, ড. ইউনূস যখন জাতিসংঘে তরুণদের নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে একটা আলাদা ভালো লাগা ছিল। ’৫২ সালে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার ব্যাপারটা তা ছিল না। শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্য আন্দোলন করেছেন, কারণ চাকরি নেই। এখন যেন এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর চাকরি হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশের সব খাতে সংস্কার করতে হবে এবং তাতে ছাত্রদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল সিএমএম কোর্টে হাজিরা দেওয়া শেষে কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শর্তানুযায়ী তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিল দায়েরের শর্তে এ সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দ প্রাপ্ত সাংবাদিক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করেছেন আদালত।
গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালতে এ মামলায় সাজার বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শর্তে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। শুনানি শেষে বিচারক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করেন। একইসঙ্গে সাজা পরোয়ানা রিকল (প্রত্যাহার) করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসেন শফিক রেহমান। জানা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আমাদেরও বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। জনগণকে বাকরুদ্ধ করতেই আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করেছেন, তারা আজ কোথায়? সরকারের এটা নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করেছে, সেগুলো যেন বাস্তবায়ন করা হয়। গত কয়েক মাসে যাদের চাকরি (সরকারি) দেওয়া হয়েছে, তারা কতটুকু যোগ্যতার ভিত্তিতে পেয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হোক।
দ প্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। তাদের দ বিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদ ও ৫ হাজার টাকা অর্থদ দেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। এ ছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদ ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদ দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্র হয়ে যোগসাজশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।