ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে এবং উপচে প্লাবিত হয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার অন্তত ১৬ ইউনিয়ন। পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ। পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌরশহর। ভারী বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। প্রতিনিধিদের খবরÑ
শেরপুর : টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সবকটি পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্লাবিত হয়েছে
নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার অন্তত ১৬ ইউনিয়ন।
পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ১ লাখ মানুষ। সড়ক ভেঙে যাওয়ায় শেরপুর-তিনআনী-নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ চারজন। একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল আসে আবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দ্রুত পানি চলে যায়। এমন বন্যা আর এ এলাকায় দেখা যায়নি বলে জানালেন এলাকাবাসী। শেরপুরের সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো কোনো নদীর বাঁধ ভেঙে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরসহ নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী উপজেলায় পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। শ্রীবরদীর বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৬৫৯, পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর পানি ৫২৫ এবং ভোগাই নদীর দুটি পয়েন্টের পানি যথাক্রমে ১৭২ ও ৫৬ মিলিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দুই সহোদর ভাইয়ের লাশ মিলল ধানখেতে : শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বানের পানির স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হওয়া সহোদর দুই ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে ধানখেতে। গতকাল বিকালে উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের ফসলের মাঠ থেকে ওই দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
নিহতরা হলেন হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৮)। তারা একই এলাকার অভয়পুর গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার নিজ বাড়ি থেকে চেলখালী নদীর পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন দুই সহোদর ভাই।
ভারী বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর অন্তত ১০ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির উঠতি আমন, সবজিবাগান, মাছের ঘের। এদিকে গতকাল দুপুরের পর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এতে নকলা উপজেলার বিস্তৃত অঞ্চল ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ১৭৭ এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে যথাক্রমে ২৫৫ ও ২৬০ মিলিমিটার। জানা গেছে, কদিন ধরে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলাসংলগ্ন মেঘালয়ের তুরা জেলায় গতকাল সকাল পর্যন্ত ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই পানি শেরপুরের ভোগাই, চেল্লাখালী ও মহারশি নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আরেক দফা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেত্রকোনা : টানা বর্ষণ আর ভারতের মেঘালয় থেকে আসা ঢলে বাড়ছে নেত্রকোনার সবকটি নদনদীর পানি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত দ্রুতবেগে গুরুত্বপূর্ণ সোমেশ^রী ও কংস নদের পানি বাড়লেও গতকাল সকালে সোমেশ্বরীর পানি কমতে শুরু করেছে। যে কারণে নদীতীরের মানুষের ভয় কিছুটা কম।