বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও মিডিয়া হাউস টার্গেট করে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে প্রশাসন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গ্রুপ অব মিডিয়া হাউস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খবরদারির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরদারি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি। এসব ব্যক্তির কেউ বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন না। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী আহমেদ বলেন, বিগত ১৬-১৭ বছর দুর্বিষহ মহাযন্ত্রণার ফ্যাসিবাদী অপশাসন সহ্য করতে গিয়ে বিএনপির অসংখ্য প্রাণ ঝরে গেছে, অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছেন অনেক নেতা-কর্মী। চিরতরে হারিয়ে গেছেন গণতন্ত্রের পক্ষে জোরালো কণ্ঠস্বরের বিপ্লবী নেতা-কর্মীরা। অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে নিজ দেশেই বাস্তুহারা শরণার্থীতে পরিণত হয়েছেন তারা। ৫ আগস্টের বিপ্লবের গুরুত্ববহ ঘটনার পর ১৬ বছর ধরে নিপীড়িত দেশবাসীকে সোনালি ভবিষ্যতের চিন্তা যখন উদ্বুদ্ধ করছে, তখন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির সুবিধাবাদী ভূমিকা সম্পর্কে সবাইকে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতা ও ছয় মিলিয়ন নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা ও ফরমায়েশি সাজা দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তির যবনিকাপাত ঘটানোর আয়োজন করা হয়েছিল। নিপীড়নের চরম অভিঘাত, অপ্রীতিকর ও মর্মপীড়াদায়ক ঘটনার ধারায় নিপীড়নের চাপে জর্জরিত নেতা-কর্মীরা যখন অসহায় এবং ধ্বংসের মুখোমুখি, ঠিক সেই সময় নিজেদের আত্মসুখ বৃদ্ধির জন্য দেশ ও দল ছেড়ে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমান। এ দুঃসময়ে অনেকেরই কোনো খবর ছিল না। সম্প্রতি ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনুকূল পরিবেশে নিজস্বার্থ সংরক্ষণ ও স্বার্থবৃদ্ধির মানসে নিজ অনুকূলে প্রশাসনকে প্রভাবিত করাসহ নানা প্রতিষ্ঠানে হানা দিচ্ছেন বলে দল বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছে। বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন, পুলিশ ও মিডিয়া হাউস টার্গেট করে দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। অথচ দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের ওপর যখন উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমানভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পৈশাচিক নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখন নিজেদের নিরাপদ রাখতে এরা বিদেশে শান্তি ও স্বস্তিতে দিনযাপন করেছেন। রাজনৈতিক দুর্যোগের ঘনঘটায় এদের জীবন কেটেছে নিরাপদে। অথচ আওয়ামী ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের পতনের পরও তাদের সৃষ্ট ক্ষতচিহ্নগুলো এখনো নিরাময় হয়নি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসিনার পেটোয়া বাহিনীগুলোর ছোড়া বুলেট ও ধারালো অস্ত্রে দীর্ঘ দুই মাসের অধিককাল জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে এখনো প্রতিদিনই কেউ না কেউ মৃত্যুবরণ করছেন। তিনি বলেন, এ অবস্থায় দীর্ঘ দুঃসময়ে প্রবাসে অবস্থান করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো জীবনযাপন করে এখন দেশে ফিরে এসে প্রভাব খাটিয়ে আরও বেশি স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টায় তৎপর থেকে প্রশাসন, ব্যবসায়ী মহল এবং মিডিয়া গ্রুপ অব হাউস, মিডিয়াসহ নানা প্রতিষ্ঠানে খবরদারির চেষ্টা করছেন। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরদারি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানান। এসব ব্যক্তির কেউ বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রিজভী আহমেদ।