সুস্বাস্থ্য সবার কাম্য হলেও বাড়তি ওজন কিন্তু কেউই চান না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো বিশ্বজুড়েই এখন একটা কথা প্রযোজ্য। আর তা হচ্ছে স্লিম মানেই ফিট। আর তাই ওজন বাড়লে যেমন স্লিম হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়, তেমনি কেউ কেউ আবার স্লিম থাকার জন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেন। অনেক সময় দেখা যায় কোনোভাবেই যেন ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ডায়েট, ব্যায়াম ইত্যাদি সবকিছুকে ব্যর্থ করে ওজন কেবল বাড়তেই থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে যদি সঠিক উপায় অবলম্বন করেন তাহলে অল্পতেই আপনি হয়ে উঠতে পারবেন স্লিম ও আকর্ষণীয়।
স্লিমেই সুন্দর
চাইলেই আপনি আস্তে আস্তে পাল্টে ফেলতে পারেন নিজেকে। সে জন্য দরকার নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি অনুসরণ। চলুন সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
> ডায়েটিং রোজকার জীবনে নিশ্চয়ই জরুরি, তবে খাবার খাওয়ার মধ্যে যেন বেশি সময়ের ব্যবধান না থাকে। ডায়েট করতে গিয়ে কখনোই না খেয়ে থাকবেন না। নিয়ম করে খাবার খেতে হবে। ভাজাপোড়া, মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করুন। ১৫ মিনিট পর চিনি ছাড়া এক কাপ চা পান করুন। চা পানের এক ঘণ্টা পর সকালের নাশতা করুন। সকালের নাশতায় দু-তিন পিস রুটি, একটি ডিম, সবজি ও সালাদ রাখুন। দুপুর ও সকালের খাবারের মাঝে ফল যেমন আপেল, পেয়ারা, কমলা ইত্যাদি খেতে পারেন। শুধু দুপুরে একটু ভাত খাবেন। মধ্যাহ্নভোজে এক থেকে দেড় কাপ ভাত, এক কাপ ডাল, সবজি, এক টুকরো মাছ বা মাংসসহ ঝোল তরকারি ও সালাদ রাখুন। বিকালের নাশতায় এক কাপ চিনি ছাড়া চা পান করুন, সঙ্গে এক থেকে দুটি টোস্ট বা বিস্কুট খেতে পারেন। রাতের খাবারের এক ঘণ্টা আগে বা সন্ধ্যার পরে ঝালমুড়ি বা ছোলামুড়ি খেতে পারেন, সঙ্গে ছানা রাখতে পারেন। রাতে আবার দু-তিন পিস রুটি, সবজি, এক কাপ ডাল ও এক টুকরো মাছ বা মাংস খাবেন। সঙ্গে এক কাপ দুধ রাখতে পারেন।
> খাওয়া-দাওয়ার সঠিক সময় মেনে চলুন। একদম ঘড়ির কাঁটা ধরে। হজমক্ষমতা গতিশীল রাখতে এটা খুব জরুরি। সারা দিনের প্রত্যেকটা খাবার খাবেন, বাদ দেবেন না। এমনকি ব্রেকফাস্ট খাওয়াও প্রয়োজন অবশ্যই। পেট দীর্ঘক্ষণ খালি রাখবেন না। এতে মেটাবলিজম কমে যাবে ও ওজন বাড়বে। নির্দিষ্ট বেলার খাবারের মাঝের সময়ে যদি খিদে পায়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে পানি খান। খেতে পারেন প্রচুর ফল। মিষ্টি, কোমল পানীয়, কেক ইত্যাদি খাবার সপ্তাহে একদিন। বিস্কুট কিনতে হলে ডায়েট বিস্কুট কিনুন। প্রাণিজ ফ্যাট, বিশেষত লাল মাংস ও ডালডা খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিন। মাংস খেলে চামড়া ও চর্বি বাদ দিয়ে খান অবশ্যই। অতিরিক্ত দুধ জাতীয় খাবার যেমন মাখন বা চিজ বেশি খাবেন না। সপ্তাহে দুদিন চলতে পারে। দিনে দুই কাপ গ্রিন-টি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান (যেমন আলু, ভাত, রুটি)। এগুলো বেশি খাওয়া মানেই শরীর মোটা হয়ে যাওয়া। লাল চালের ভাত ও লাল আটার রুটি খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো। খাবারের প্লেটের আকার ছোট করুন এবং একবারের বেশি দুবার নিয়ে খাওয়ার প্রবণতা ত্যাগ করুন। খাবার একবারই প্লেটে তুলে নেবেন। চেষ্টা করুন সকালে ভারী ব্রেকফাস্ট করার। সামান্য ভারী লাঞ্চ এবং হালকা ডিনার করার। নাশতা হিসেবে খান বাদাম, মুড়ি, ফল, ডায়েট বিস্কুট। চিনি খাওয়া কমিয়ে নিয়ে আসুন দিনে দুই চামচে। এর বেশি প্রয়োজন নেই।
> উপরের খাদ্যাভ্যাসগুলো ছাড়া প্রতিদিন অবশ্যই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করুন। দিনে অন্তত একবার হালকা শরীরচর্চা করা জরুরি। দৈনিক ২০ মিনিট সময় দিন ব্যায়ামে। হয়তো কোথাও হেঁটে গেলেন, কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেরে নিলেন জগিং।
> রাতের খাবার খাওয়ার পর খানিকক্ষণ হালকা শরীরচর্চা করা ভালো। খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর একটু হেঁটে নিতে পারেন। এতে শরীর ঝরঝরে থাকবে। এলোপাতাড়ি ব্যায়াম না করে নিজের শরীরের সঙ্গে মানানসই ব্যায়াম বেছে নেবেন। দৈনিক সময়মতো করবেন ব্যায়ামটুকু। বাজার থেকে কেনা সস বাদ দিন, এতে চিনি অনেক।
> প্রত্যেক সপ্তাহে একই দিনে ও একই সময়ে ওজন মাপুন। এটা আপনাকে মানসিকভাবে সাহায্য করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে, রাখবে সতর্ক।
> খাওয়ার পরপরই বসে থাকা কিংবা শুয়ে থাকা যাবে না। একাধারে অনেকক্ষণ বসে থাকা যাবে না।
> দিনে প্রচুর পানি খাবেন কিন্তু খাবারের সঙ্গে কিংবা একবারে অনেক পানি খেয়ে ফেলা যাবে না।