শেষ হলো বইমেলা। ফেব্রুয়ারি পুরো মাসে বই কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলেছেন। কেনা এবং পড়ার মাঝে যত্ন নেওয়া হয়ে ওঠে না। ব্যস্ততায় সংরক্ষণও করা হয়ে ওঠে না। একটু সচেতন হলেই নিতে পারেন ভালোবাসার বইয়ের যত্ন। রইল পরামর্শ।
মন ভালো রাখতে বইয়ের তুলনা নেই। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা-ই আলাদা। অন্য কিছুর সঙ্গে জ্ঞানার্জনের এই বইয়ের তুলনা হয় না। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাতৃভাষা ও প্রিয়জন। বই পড়ার মাধ্যমে জানা যায় জাতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে।
শেষ হলো প্রাণের বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসে বই কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলেছেন। কেনা এবং পড়ার মাঝে যত্ন নেওয়া হয়ে ওঠে না। নিত্যদিনের ব্যস্ততায় সঠিক সংরক্ষণও করা হয়ে ওঠে না। মনে রাখা উচিত বই শুধু মানুষের বন্ধু নয়, ঘরের অন্যতম শোভাবর্ধনের মাধ্যমও। ঘরের অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বইয়ের তাক নির্বাচন করে অন্দরকে করে তুলুন অতুলনীয়। বইয়ের তাকে রয়েছে এখন নানা রকমফের নকশার সমাহার। বুক সেলফের রং, ঘরের ফার্নিচার ও ফেব্রিক্সের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। বই শোভাবর্ধনের পাশাপাশি বইগুলোর প্রয়োজন যত্নআত্তি। অনেক কারণেই বইয়ের ক্ষতি হতে পারে। একটু সচেতনতাই আপনার প্রিয় বইগুলো অক্ষত থাকবে দীর্ঘদিন। বই ভালো রাখার কিংবা বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কিছু সহজ কৌশল জানানো হলো।
বইয়ের যত্নের প্রথম এবং মুখ্য বিষয় হলো বই সাজানো। ভালোবাসার বইগুলো আলমারি কিংবা সেলফে সাজিয়ে রাখার ক্ষেত্রে খাড়া করে রাখুন। বই সাজাতে খেয়াল রাখতে হবে যেন বইগুলো আলগা এবং খুব জড়সড় না থাকে। আলগা থাকলে বইগুলো কাত হয়ে গিয়ে মলাট ও বাইন্ডিংস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার খুব জড়সড় করে রাখলে প্রচ্ছদ পাতা একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া আকারের তারতম্যের কারণেও বই নষ্ট হতে পারে। বড় বইগুলো একদিকে, ছোট বইগুলো আরেক দিকে একসঙ্গে রাখবেন। ছোট-বড় একসঙ্গে রাখার কারণে বই অনেক সময় বাঁকা হয়ে যায়, এতে জায়গাও লাগে বেশি। বইগুলো একটার ওপর একটা সাজিয়ে স্তূপাকার করে না রাখাই ভালো। এমন বোর্ড বানানো উচিত, যেন বইয়ের কোনাগুলো নষ্ট না হয়ে যায়।
বই পড়তে পড়তে কোথাও যেন থেমে গেলেন। তখনই জায়গাটি মনের রাখার জন্য সুবিধামতো কলম বা পেনসিল দিয়ে দাগ দিয়ে থাকেন। ব্যক্তিগত বই না হলে এই দাগ কাটা থেকে বিরত থাকুন। এটা অন্যের পছন্দ নাও হতে পারে। আবার অনেকেই বইয়ের পাতা উল্টানোর সময় থুথু ব্যবহার করেন। এটা অস্বাস্থ্যকর তো বটেই, সঙ্গে বইও নষ্ট হয়। বই পড়ার সময় পাতা ভাঁজ করা উচিত নয়। পাতায় চিহ্ন দেওয়ার জন্য বুক মার্কার বা টুকরো কাগজ ব্যবহার করুন। কিছু কিছু বই আর ডায়েরিতে ফিতা দেওয়াই থাকে, যা বুকমার্ক হিসেবে কাজ করে। তবে অনেক পাঠক ভিন্ন ধরনের বুকমার্ক ব্যবহার করে থাকেন। যখন একটু ভারী বই পড়বেন তখন বইটি কোলে কুশনে রেখে পড়ুন। এতে বইয়ের স্পাইন ভেঙে বই নষ্ট হবে না। খাওয়ার সময় বই না পড়াই ভালো। পড়ার মাঝে বই উল্টে রাখবেন না, এতে বাইন্ডিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সহজে খুঁজে পেতে বইয়ে লেভেল ও ট্যাগ লাগান। বুক সেলফটিতে বিষয় অনুযায়ী লেভেল ব্যবহার করতে পারেন। বুক সেলফ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। এতে ধুলোবালি জমে বই নষ্ট হবে না। সেলফ থেকে বই নামানোর সময় পুরো বই ধরে নামান। শুধু ওপরের অংশ ধরে টানলে বই নষ্ট কিংবা ছিঁড়ে যেতে পারে।
অল্প জায়গার মধ্যে বুক সেলফ তৈরি করতে হলে বাতাস চলাচলের জায়গা বেছে নিন। বই বাঁধতে রাবার ব্যান্ড কিংবা শক্ত দড়ি ব্যবহার না করাই ভালো। এতে বইয়ের পাতা বা মলাট ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। অন্য কোথাও বই পাঠাতে হলে বাক্সে ভরে অথবা বড় খামে পাঠাতে পারেন। বুক সেলফে অবশ্যই ন্যাপথলিন রাখুন। এতে পোকামাকড় কম হবে এবং দুর্গন্ধ ছড়াবে না। বছরে অন্তত দুবার সব বই বের করে খোলা স্থানে রাখুন। বই সরাসরি রোদে রাখবেন না। এতে পাতা খারাপ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। শুকনো সুতির কাপড় দিয়ে ভালো করে সব বই মুছে নিন। এতে বইয়ের ওপরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বই তো শুধু নিজে পড়বেন না। বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রতিবেশীও বই পড়তে নিয়ে যেতে পারে। তাই বই ধার দেওয়ার সময় বইয়ের নাম, যাকে দিচ্ছেন তার নাম লিখে রাখুন। এতে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এ ছাড়া কারও কাছ থেকে বই আনলে সময় মতো মলাট দিয়ে ফেরত দিন। এতে সুরুচির পরিচয় মিলবে।