শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান ঈদে

সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান ঈদে

ঈদে বাহারি, ঐতিহ্যবাহী, আকর্ষণীয় খাওয়া-দাওয়াতে আত্মতৃপ্তি ও মানসিক প্রশান্তি অনুভূত হয়। যা ব্যক্তি জীবনের জন্য খুবই জরুরি। আত্মতৃপ্তি ও মানসিক প্রশান্তি মানুষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘায়ু করে।

ঈদে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে পোশাক-আশাক, ঘর-দোর সাজানো, বেড়ানো এবং আকর্ষণীয় ইভেন্টের পাশাপাশি মজাদার মুখরোচক খাবারও অন্যতম। ঈদে বাহারি, ঐতিহ্যবাহী আকর্ষণীয় খাওয়া-দাওয়াতে আত্মতৃপ্তি ও মানসিক প্রশান্তি অনুভূত হয়; যা ব্যক্তি জীবনে খুবই জরুরি। আত্মতৃপ্তি ও মানসিক প্রশান্তি মানুষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং মানুষকে দীর্ঘায়ু করে।

ঈদে মজাদার খাবারের সঙ্গে স্বাস্থ্য রক্ষার কথা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। ঈদে আমাদের সমাজে যেসব খাবার প্রচলিত যেমন— মাংস, বিরিয়ানি, পোলাও, কোরমা, বিভিন্ন ধরনের কাবাব, সেমাই, পায়েস ও অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় পিঠা, হালিম, ফুসকা, চটপটি, মিষ্টি, দই ইত্যাদিই প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ঈদে খাবারের মেনুতে শক্তিদায়ক খাবারেই প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয় (যে সকল খাবারের প্রচুর ক্যালরি থাকে), চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমাণ খুব বেশি থাকে এবং প্রচুর আমিষ জাতীয় খাদ্য উপাদান ব্যবহার করে ঈদে খাবারের মেনু সাজানো হয়ে থাকে। এ ধরনের খাবার খুব বেশি খেলে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য-পেটে গ্যাস উৎপন্ন হওয়াসহ আরও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে এবং খাবারকে স্বাস্থ্যসম্মত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তাতে ঈদের আনন্দ এবং স্বাস্থ্যরক্ষা দুই-ই অক্ষুণ্ন থাকবে।

আঁশযুক্ত খাবার সংযুক্তকরণ : বিশেষ করে কাঁচা শাক-সবজি ও ফলমূল। ঈদের খাবারের সঙ্গে অবশ্য সালাদ জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণে যুক্ত করতে হবে। যেমন— টমেটো, শসা, গাজর, মুলা, কাঁচা পেঁপে, লেটুস পাতা, ধনে পাতা ইত্যাদি। ফলের সালাদ বা মিক্সড সালাদের জন্য আপেল, নাশপাতি, কিশমিশ, খেজুর, আনজির, স্ট্রবেরি, আলু বোখারা, চেরি, অল্প পরিমাণে কাঁচা/পাকা কামরাঙ্গা বা জলপাই জাতীয় ফল ব্যবহার করা যেতে পারে। ঈদের খাবাবের ফাঁকে ফাঁকে এসব সালাদ জাতীয় খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর এবং হজমে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ক্যালরির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।

মসলা জাতীয় খাবার : মসলা জাতীয় খাদ্যবস্তুতে অনেক ঔষধি গুণাগুণ বিদ্যমান। পোলাওয়ের সঙ্গে বেরেস্তা, আলু বোখারা ও কিশমিশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে খাবারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং খাবার স্বাস্থ্যকর হবে। সালাদে পরিমাণ মতো পিয়াজ কুচি ব্যবহার করতে ভুলবেন না। গরু এবং খাসির মাংস পাক করার সময় আস্ত দেশি রসুন ব্যবহার করতে পারেন। পাক অর্ধেক হয়ে গেলে, আস্ত রসুনের মুখের দিকে কিছু অংশ এমনভাবে কেটে বাদ দিবেন যাতে রসুনের প্রতিটি কোয়ার অগ্রভাগ কাটা পড়ে, তারপর ছালসহ আস্ত রসুন তরকারিতে দিয়ে দিবেন। তাতে তরকারিতে রসুনের গন্ধও ছড়াবে না। খাবার সময় আস্ত সেদ্ধ রসুন চেপে আচার মতো শাঁশ বের করে খাওয়া যাবে। মনে রাখবেন, রসুন রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের প্রভৃত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

দই/ঘোল জাতীয় খাবার : দুধ/দই/ঘোল জাতীয় উপাদান বিভিন্নভাবে ঈদের খাবারের মেন্যুতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে খাবারের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে। খাবার সহজপাচ্য হবে। রুচি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে। কোরমা ও অন্যান্য

মাংসের আইটেমে টক দই অথবা দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। ফালুদা এবং বোরহানি আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখার চেষ্টা করবেন। তা না হলে দই খাওয়ার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন ঈদের খাবার যত স্বাস্থ্যসম্মত হবে, পেটের জন্য তত সহনীয় এবং ঈদের আনন্দ তত বেশি নিরবচ্ছিন্ন হবে।

লেখক—

ডা. এম শমশের আলী

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.) ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর