আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মানুষ! আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাঁর রাসুলদের যেসব বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরও সেসব বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবগত।’
(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)
উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ধর্মীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলো জীবনের সর্বত্র পবিত্রতা অর্জন করা করা। মুমিন তার বোধ ও বিশ্বাস থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদ সব কিছুতে পবিত্রতা রক্ষা করে।
সব কিছুতে পবিত্রতা প্রয়োজন কেন
মুমিন জীবনের সব ক্ষেত্রে তা-ই করে যা আল্লাহ পছন্দ করেন। কেননা মুমিনজীবনের সব কিছু আল্লাহর জন্য নিবেদিত। মহান আল্লাহর প্রতি মুমিনের নিবেদন হলো, ‘বলুন! আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগত্গুলোর প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্য।’
(সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)
মুমিনের জীবনে পবিত্রতার নানা দিক
নিচে মুমিনজীবনে পবিত্রতার নানা দিক তুলে ধরা হলো।
১. বিশ্বাসের পবিত্রতা : মহান স্রষ্টা এবং তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে ভুল বিশ্বাস লালন করা হলো বিশ্বাসের অপবিত্রতা। মুমিন বিশ্বাস ও মননে অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক। সুতরাং তারা যেন এই বছরের পর আর মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয়।’
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৮)
২. কাজের পবিত্রতা : মুমিন তার দৈনন্দিন কাজ ও আমলের ক্ষেত্রে পবিত্রতা রক্ষা করে এবং অশ্লীলতা, কলুষতা, নোংরামি ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ পরিহার করে।
আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)
৩. খাবারের পবিত্রতা : পানাহারে মুমিনরা পবিত্রতা রক্ষা করে। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবগত।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)
৪. পোশাকের পবিত্রতা : মুমিনের পোশাক-পরিচ্ছদও হয় পবিত্র। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! দাঁড়াও, (আপনজনদের) সতর্ক করো, তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো এবং তোমার পোশাক পবিত্র রাখো।’ (সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ১-৪)
৫. ইবাদতে পবিত্রতা : ইবাদত প্রার্থনায় অংশগ্রহণের আগে মুমিন পবিত্রতা অর্জন করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করবে; পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬)
৬. ব্যক্তিগত জীবনে পবিত্রতা : শুধু ঈমান ও ইবাদতের ক্ষেত্রে নয়, বরং মুমিন একান্ত ব্যক্তিগত জীবনেও পবিত্রতা রক্ষা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘লোকে তোমাকে রজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, তা অশুচি। সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী সংগম বর্জন করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী সংগম করবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন