রোমানদের পক্ষ থেকে ইসলামী খিলাফতের প্রতি যে হুমকি ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা নির্মূল করতে ১৩ হিজরিতে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) একটি বিশেষ মুসলিম বাহিনী পাঠান। এই বাহিনীকে তিনি চার ভাগে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক ভাগের জন্য তিনি স্বতন্ত্র অধিনায়ক নিযুক্ত করেন এবং প্রত্যেক বাহিনীর জন্য পৃথক লক্ষ্য নির্ধারণ করেন।
তিনি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-কে হিমসের দিকে, আমর ইবনুল আস (রা.)-কে ফিলিস্তিনের দিকে, ইয়াজিব ইবনে আবি সুফিয়ান (রা.)-কে দামেস্কের দিকে এবং শুরাহবিল ইবনে হাসানা (রা.)-কে জর্দানের দিকে পাঠান।
অমূল্য উপদেশ
আবু বকর সিদ্দিক (রা.) শাম অভিযানে পাঠানো বাহিনীকে বিদায় জানাতে কিছুদূর পর্যন্ত হেঁটে এগিয়ে যান। বিদায়ের সময় তিনি সমবেত সেনা ও সেনাপতিদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দান করেন। বিশেষত সেনাপতিদের তিনি অমূল্য নির্দেশনা দান করেন। তিনি বলেন-
১. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করবে। কেননা তিনি গোপন বিষয়গুলোকে সেভাবেই জানেন যেভাবে প্রকাশ্য বিষয়গুলোকে জানেন।
২. অধীনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও সদাচার করবে।
৩. তাদের যখন উপদেশ দেবে, তখন সংক্ষিপ্ত উপদেশ দেবে। কেননা কথা দীর্ঘ হলে তার একটি অংশ অপর অংশকে ভুলিয়ে দেয়।
৪. প্রথমে নিজেকে সংশোধন করবে। এটা করলে দেখবে অধীন ব্যক্তিরা নিজে নিজেই সংশোধন হয়ে যাবে।
৫. তোমাদের কাছে শত্রু বাহিনীর দূত এলে তাকে সম্মান করবে।
৬. সর্বদা সত্য কথা বলবে, যাতে সঠিক পরামর্শ পাওয়া যায়।
৭. নিজেদের রহস্য গোপন রাখবে, যাতে তোমাদের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।
৮. রাতে নিজ সাথিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে, যাতে তোমরা সব ধরনের সংবাদ জানতে পারো।
৯. সৈন্য বাহিনীতে পাহারা চৌকির ভালো ব্যবস্থা করবে, কখনো কখনো হঠাৎ গিয়ে পাহারাদারির কাজ পরিদর্শন করবে।
১০. মিথ্যাবাদীদের সঙ্গ ত্যাগ করবে। সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত সহচর বেছে নেবে।
১১. যার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে নিষ্ঠার সঙ্গে করবে। কাপুরুষিকতা ও খিয়ানত থেকে বিরত থাকবে।
১২. তোমরা কিছু লোককে দেখতে পাবে যে তারা দুনিয়াবিমুখ হয়ে নিজ উপাসনালয়গুলোতে বসে আছে। তোমরা কখনোই তাদের উত্ত্যক্ত করবে না, তাদেরকে তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেবে।
এরপর ইসলামী বাহিনীর চার অধিনায়ক নিজ নিজ সৈন্যদল নিয়ে শামের উদ্দেশে রওনা হন।
সূত্র : খিলাফতে রাশেদা, পৃষ্ঠা-৬০
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ