রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আক্তারের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার জানে আলম অপুর বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পুনঘরদীঘি গ্রামে। গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত আনোয়ার হোসেনের ছেলে তিনি। জানা গেছে, তাঁর বাবা আনোয়ার ঢাকার একটি কম্পানিতে কাজ করতেন। তবে প্রায় ১০ বছর আগে তিনি মারা যান।
অপু স্থানীয়ভাবে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। রাজধানীর গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র অপু গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে প্রথম সারির সমন্বয়ক ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর সমন্বয়ক পদ ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ ও সম্পদ গড়তে থাকেন।
গণ-অভ্যুত্থানের কয়েক মাসের মধ্যে অপু ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে স্মার্ট ও দামি পোশাকে চলাফেরা শুরু করেন। ছবি তোলেন সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ ও উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তা ফেসবুকে যুক্ত করতে থাকেন। তাঁর সহপাঠীরাও তাতে বিস্মিত হন।
এ অবস্থায় জয়পুরহাটের পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও তাঁকে সমীহ করে চলতেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ১১ আগস্ট অপু জয়পুরহাটে যান। তখন জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নুরে আলম এবং বর্তমান পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব অপুকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসব ছবি অপু তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন।
তবে রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য জানতে পেরে গ্রামের লোকজন বিস্মিত হয়নি।
অপুর পুনঘরদীঘি গ্রামে গেলে জানা যায়, গ্রামে মাটির একটি দোতলা বাড়ির সঙ্গে ছোট্ট একটি ইটের পাকা বাড়ি আছে তাঁদের। বাবা মারা যাওয়ার পর অপুর মা অন্যত্র বিয়ে করেছেন। অপুর একমাত্র ছোট বোনও মায়ের কাছেই থাকে। বাড়িতে কেউ না থাকায় সব সময় তালা দেওয়া থাকে ঘরগুলো। বাবার মৃত্যুর পর অপু নানার বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। অপু আক্কেলপুরে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরে ঢাকায় গিয়ে বেসরকারি গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর সমন্বয়ক পদ ব্যবহার করতে শুরু করেন। গ্রামবাসী জানায়, অপু গ্রামে বেশিদিন কাটাননি। তাঁর বাবার দু-তিন বিঘা জমি আছে। সেই জমি অনেক আগে থেকেই বন্ধক রাখা। বিবাহিত জীবনে অপুর সঙ্গে তাঁর আগের স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়েছে। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। কোথায় বিয়ে করেছেন তা কেউ জানে না। নাতি অপুর গুলশানের চাঁদাবাজির কথা জানেন তাঁর নানি আখলাকুন্নেসা বকুল। তিনি বলেন, ‘মায়ের বিয়ের পর অপু নানাবাড়িতে আর তেমন আসে না। অনেক আগে এখানে দু-তিন বছর ছিল সে।’ অপুর মামি জেসমিন আক্তার বলেন, ‘ভাগিনা জানে আলম অপু ঢাকায় অনেক বড় নেতা হয়েছে বলে জানতাম। সে অভিভাবকহীন । আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত না। অপু ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছে বলে শুনেছি।’
আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দেওয়ান তানভীন নেওয়াজ বলেন, ২০২২ সালে অপু ছাত্রদল করতেন। নারী কেলেঙ্কারির দায়ে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারপর অপু একেক সময় একেক দলের সঙ্গে যুক্ত হন।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল