কোনো পদে কাউকে নিয়োগ প্রদানের আগে তাঁর যোগ্যতা যাচাই করা আবশ্যক। ব্যক্তি অযোগ্য হলে তাকে কোনোভাবেই নিয়োগ দেওয়া যাবে না। চাই সে যত আপনজন বা পরিচিত হোক। আবু জর (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)-কে বললাম, আমাকে কি আমেল (প্রশাসক) হিসেবে নিয়োগ দেবেন না? উত্তরে নবীজি (সা.) বলেন, আবু জর! তুমি দুর্বল আর এটি (পদ) আমানতস্বরূপ।
কিয়ামতের দিন এটি মানুষের লজ্জা ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। হ্যাঁ, দায়িত্বটাকে যে ভালোভাবে গ্রহণ করবে এবং অর্পিত দায়িত্বের হক যথাযথ আদায় করবে সে বেঁচে যাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮২৫)
জেনে-বুঝে কোনো অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া বা তাকে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করা খিয়ানত। কেননা হাদিসে পরামর্শ চাওয়া হয় এমন ব্যক্তিকে আমানতদার বলা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইকে কোনো বিষয়ে পরামর্শ দিল, অথচ সে জানে কল্যাণ ভিন্ন কিছুতে, তবে সে তার সঙ্গে খিয়ানত করল। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৫৭)
আল্লামা মনজুর নোমানি (রহ.) বলেন, ‘যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, পরামর্শ গ্রহণকারী তাকে নির্ভরযোগ্য মনে করেই তো তার কাছে যায়। নিজের একটি আমানত তার কাছে সোপর্দ করে। অতএব, তার উচিত আমানতের হক আদায়ে ত্রুটি না করা।
ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করেই তাকে কল্যাণমূলক পরামর্শ দেওয়া এবং বিষয়টির গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করা, নতুবা সে দোষে দোষী সাব্যস্ত হবে।’ (মাআরিফুল হাদিস : ২/১৫১)
অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে তা নিম্নোক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) মজলিসে মানুষের সামনে আলোচনা করছিলেন। তখন তাঁর কাছে একজন বেদুঈন এসে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বললেন, লোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন, কিন্তু তার কথা পছন্দ করেননি।
আর কেউ কেউ বললেন, বরং তিনি শুনতেই পাননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) আলোচনা শেষে বললেন, কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলল, এই যে আমি, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, যখন কোনো অযোগ্য ব্যক্তির ওপর কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯)
হাদিসবিশারদরা বলেন, উল্লিখিত হাদিস দ্বারা অযোগ্য ব্যক্তির নিয়োগদানের ভয়াবহ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কেননা অযোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ পেলে সে আমানতের খিয়ানত করে, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং একই সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তি উপযুক্ত সম্মান ও দায়িত্ব লাভ থেকে বঞ্চিত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন