বর্তমান সময়ে ভয়ঙ্কর এক অপরাধের নাম সিম কার্ড ক্লোনিং। অপরাধীরা সিম কার্ড ক্লোনের মাধ্যমে একই নম্বরের একাধিক সিম কার্ড তৈরি করে। ফলে ওই নম্বরে কোনো কল বা ম্যাসেজ এলে তা একই সাথে সব সিমেই আসে। অন্যের মোবাইল নম্বরের মতো নম্বর বানিয়ে তার পরিচিতজনদের ফোন করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া বা দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তির নম্বর কপি করে ফোন করে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায়ের ঘটনা এখন দেশে আর নতুন নয়। প্রতারণার পাশাপাশি অনেক সময় এই ক্লোন সিম দিয়ে হুমকি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ঘটনাও ঘটে।
এ ছাড়া ক্লোন করা সিম দিয়ে (মোবাইল নম্বর) এসএমএস বা কল-লগ অথেনটিকেশন নির্ভর যে কারো ফেসবুক আইডি, ইন্সট্রাগ্রাম ইত্যাদি হ্যাক করা সম্ভব। মোবাইল ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সকল প্রকার অর্থ লেনদেনের অ্যাকাউন্ট দখলে নিয়ে, লেনদেনের সকল তথ্যসহ টাকা-পয়সা কব্জা করে নেওয়াও সম্ভব।
অন্যদিকে, মেসেজিং অ্যাপ আইএমও, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা দখলে নিয়ে নিতে পারে প্রতারকরা। এক কথায় সিম কার্ড ক্লোনিং-য়ের মাধ্যমে ব্যক্তির আইডেন্টিটি ছিনতাই হয়ে যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত এসব তথ্যে হস্তক্ষেপ করা জঘন্য অপরাধ। নিম্নে সিম কার্ড ক্লোনিং-এর মাধ্যমে কিছু পাপের ভয়াবহতা তুলে ধরা হলো।
অবৈধভাবে ফোন কল ও মেসেজে প্রবেশ : সিম কার্ড ক্লোন করে অপরাধীরা বৈধ ব্যবহারকারীর ফোন কল এবং এসএমএসের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য, ব্যক্তিগত মেসেজ, লোকেশন, কল লিস্ট ইত্যাদি চুরি করে। সাধারণত মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটি তালাশ করতেই এমন ফাঁদ পাতা হয়। অথচ ব্যক্তির গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করা নিষেধ। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ব্যক্তির অধিকার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ কিছু কিছু অনুমান তো পাপ এবং তোমরা কারোর গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান কোরো না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
ব্যাংকিং ফ্রড : অনেক ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য ওটিপি বা টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন প্রয়োজন হয়, যা ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বরে পাঠানো হয়। সিম ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে অপরাধীরা সেই ওটিপি চুরি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি থেকে অর্থ চুরি করতে পারে। চুরি ইসলামের দৃষ্টিতে এতটাই জঘন্য অপরাধ যে, ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থায় চুরির শাস্তি হাত কেটে দেওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আজাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩৮)
অপরাধমূলক কাজ করা : ক্লোন করা সিম ব্যবহার করে অপরাধীরা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত হতে পারে, যেমন অবৈধ লেনদেন বা সন্ত্রাসবাদে সাহায্য করা, কাউকে হুমকি দেওয়া, যেখানে মূল ব্যবহারকারীকে দোষারোপ করা হয়। এখানে দু ধরনের অপরাধ পাওয়া যায়, এক. সিমের মূল মালিককে নিরাপরাধ হওয়া সত্ত্বেও বড় ধরনের অপরাধের অভিযোগ মাথা নিতে হয়। যা একটা নিপরাধ লোককে বিপদে ফেলার শামিল। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪১)
দুই. অপরাধীরা এর মাধ্যমে অন্যকে হুমকি, গালাগাল ইত্যাদি দিয়ে সিমের মালিককে বিপদে ফেলে। অথচ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া পাপ আর তার সাথে যুদ্ধ করে কুফরি।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪১১২)
প্রতারণা করা : অনেক সময় সিম কার্ড ক্লোন করে সিমের মালিকের পরিচিত মহল থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। আবার অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। অর্থ আদায়ের সময় যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয় ক্লোন করা সিমগুলো। যাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রকৃত অপরাধীকে সনাক্ত না করতে পারে। প্রতারণা এত বড় অপরাধ যে আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রতারকদের তাঁর উম্মত বলে স্বীকৃতি দেবেন না। যেখানে নবীজি (সা.)-এর সুপারিশ ছাড়া নাজাত পাওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয় আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৪)
বিডি প্রতিদিন/এমআই