সন্তানকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে চান মা-বাবা উভয়েই। কখনো কখনো সন্তানকে নিয়ে তাঁদের স্বপ্ন যেমন অভিন্ন হয়, তেমন ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্নও দেখে থাকেন মা ও বাবা। মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গি এক না হলে সন্তান প্রতিপালন নিয়ে উভয়ে মধ্যে মতভিন্নতাও দেখা দেয়। এমনকি তা মনোমালিন্যের পর্যায়ে পৌঁছে যায় কখনো।
ইসলাম এ ক্ষেত্রে মা-বাবা উভয়কে পরামর্শ করে চলার পরামর্শ দেয়, যেন তাঁদের মানসিক দ্বন্দ্বের প্রভাব সন্তানের ওপর না পড়ে।
সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব কার
ইসলামের দৃষ্টিতে বাবাই সন্তানের মূল অভিভাবক। তাই সন্তানের যাবতীয় দায়দায়িত্ব পিতার ওপরই বর্তায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।
কাউকে তার সাধ্যাতীত কার্যভার দেওয়া হয় না। কোনো জননীকে তার সন্তানের জন্য এবং কোনো জনককে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩)
মায়ের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ
ইসলাম সন্তান প্রতিপালনের মূল দায়িত্ব পিতার ওপর অর্পণ করলেও মায়ের মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি তারা পরস্পরের সম্মতি ও পরামর্শক্রমে স্তন্য পান বন্ধ রাখতে চায়, তাহলে তাদের কারো কোনো অপরাধ নেই।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩)
উল্লিখিত আয়াতে সন্তান প্রতিপালনে মা ও বাবার পারস্পরিক মতামতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ সন্তানের প্রতি মায়ের ত্যাগ ও কষ্টের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে।’
(সুরা : আহকাফ, আয়াত : ১৫)
তাফসিরবিদরা বলেন, উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ মায়ের কষ্টের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। এতে বোঝা যায়, মা সম্মান-মর্যাদা ও মূল্যায়নে অগ্রাধিকার লাভ করবেন।
মা-বাবার পরামর্শেই সন্তানের কল্যাণ
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যদি শিশুর মা ও বাবা দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই স্তন্যদান বন্ধ করতে চায়, এতে তারা সন্তানের কল্যাণ আছে বলে মনে করে, এই বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং একমত হয়, তবে তাদের কোনো দোষ নেই।’ আয়াতের শিক্ষা হলো, এ ক্ষেত্রে একজন ছাড়া অপরজনের পরামর্শ যথেষ্ট নয়। একজনের বৈধ নয় অপরজনের সঙ্গে পরামর্শ করা ছাড়া অন্যজনের ওপর তা চাপিয়ে দেওয়া। সুফিয়ান সাওরি (রহ.)-সহ অন্যরা এমনটিই বলেছেন। শিশুর ব্যাপারে পরামর্শের মধ্যে আছে শিশুর জন্য সতর্কতা ও কল্যাণকামিতা। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহও বটে। কেননা আল্লাহ শিশুর প্রতিপালনে মা-বাবার ওপর বিশেষ বিধি-নিষেধ দিয়েছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন শিশুর প্রতি ও তাদের নিজেদের প্রতি কল্যাণকামী হওয়ার।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/৩৭৭)
সুতরাং সন্তান প্রতিপালন ও তার ভবিষ্যৎ জীবনের গতিপথ নির্ধারণে মা-বাবার পারস্পরিক পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিবাদ শিশুকে বিপথগামী করে
মা-বাবার ঝগড়া ও বিবাদ শিশুর কোমল মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই মা-বাবার উচিত তা পরিহার করা। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, শিশু মা-বাবার কাছে আমানত এবং তার অন্তর মূল্যবান মণিমুক্তাতুল্য। তা শূন্য ক্যানভাসের মতো পবিত্র ও নির্মল। তা যেকোনো চিত্রের জন্যই উপযোগী এবং তাকে যেদিকে ইচ্ছা ফেরানো যায়। তাকে যদি ভালো কাজের শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে সে দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্যবান হবে। আর যদি তাকে মন্দ কাজে অভ্যস্ত করা হয় বা পশুর মতো অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করা হয়, তাহলে সে হতভাগ্য ও ধ্বংস হবে। শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ হলো তাকে আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলি শিক্ষা দেওয়া।
(আল ওয়াজিজ ফিত-তারবিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-২)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন