শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

গাছের চারায় ওহিদ শেখের সুখের দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

গাছের চারায় ওহিদ শেখের সুখের দিন

‘গ্রামে গ্রামে গাছের চারা ফেরি করে বেচতাম। লোকে বলত আর কোনো কাজ পেলি না! এ নিয়ে অনেকেই হাসাহাসিও করত। আমি সৎ পথে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছি। আমি বলতাম এই গাছই একদিন আমার ভাগ্য বদলে দেবে। সেই গাছ বেচে এখন বছরে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় করছি। গেল বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পয়েছি।’ রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীরের বাসিন্দা আবদুল ওহিদ শেখ তার সফলতার গল্পটি এভাবেই শুরু করলেন। ওহিদ শেখ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে মালির চাকরি করতেন। চাকরির পাশাপাশি ৯০ সালে নগরীর মডার্ন মোড়ে ২৪ শতক জমি বর্গা নিয়ে গাছের চারা রোপণ করেন। অবসর সময়ে উত্পাদিত চারা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করতেন। লোকে বলত ‘গাছ পাগলা ওহিদ’। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে টাকা ধার করে গড়ে তোলেন ‘নাসিম নার্সারি’। নাসিম তার ছেলের নাম। বর্তমানে নগরীর মডার্ন মোড় ও সদর উপজেলার শলেয়া শাহ, হরকলি, রতিরামপুর এলাকায় নিজের জমি ৬ একর এবং ইজারায় নেওয়া ১৯ একর মোট ২৫ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চারা উত্পাদন করছেন তিনি। তিনি জানান, তার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের ১৩ লাখ চারা রয়েছে। আমের চারার মধ্যে হাঁড়িভাঙা, লেংড়া, রুপালি, আম্রপলি, গোপাল ভোগ, আশ্বিনা, মিশ্রিভোগ, খিরসা, ফজলি জাতের চারাই বেশি। বেদানা, চায়না, বোম্বাই, মাদ্রাজি জাতের লিচুর চারা রয়েছে। এ ছাড়া তার নার্সারিতে আকাশমণি, অ্যাকাশিয়া ক্রস, ম্যানজিয়াম, রেইনট্রি, আমড়া, ডালিম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা, জলপাই, পেঁপে এবং ঔষধি গাছের চারার মধ্যে রয়েছে হরীতকী, বহেড়া, আমলকী, নিম, নিসিন্দা, আকন্দ, অশ্বগন্ধা ও আগর। তার নার্সারির উত্পাদিত চারার গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদা ব্যাপক।

পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, ঝিনাইদহ, বরিশাল. কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা চারা কিনে নিয়ে যান। নার্সারিতে ১০০ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। ব্যয় মিটিয়ে বছরে আয় হয় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। জেলার সবচেয়ে বড় নার্সারির মালিক এখন ওহিদ শেখ। জাতীয় পদক পেলেও সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে জানান ওহিদ শেখ। তিনি আরও জানান, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে নিজেই বিনামূল্যে ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিজেই ফলদ ও বনজ গাছের চারা লাগিয়েছেন। বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ করলে তিনি উপহার সামগ্রীর পাশাপাশি একটি করে গাছের চারা উপহার দেন। অক্ষরজ্ঞানহীন ওহিদ শেখ ছয় ছেলেমেয়ের জনক। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে এমএ পাস করেছেন। এক ছেলে নাসিম বাবার সঙ্গেই কাজ করেন। ছোট ছেলে স্কুলে পড়ে। ওহিদ শেখের নার্সারিতে কাজ করেন বিধবা আমেনা খাতুন (৩০)। তিনি জানান, ‘অন্যের বাড়িত কাম করি দিন কাটাচনো। ওহিদ ভাই ডাকে কামোত নাগে দেলে। ছয় বছর ধরি তার নার্সারিত কাম করতুচি। প্রত্যেক দিন ২০০ টাকা মজুরি পাই। সেই টাকা দিয়া সংসার চালাই। একটা বেটাক পড়ালেখাও করাই। বেটা এলা ক্লাস টেনে (দশম শ্রেণি) পড়ে।’ জেলা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি মুয়িদ ইবনে ফেরদৌস শান্ত বলেন, আইনজীবী বাবার ইচ্ছে ছিল এলএলবি পাস করে আমিও আইন পেশায় যোগ দেব। কিন্তু সৎ পথে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজতে গিয়ে চার একর জমিতে নার্সারি গড়ে তুলি। এখন বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হয়। নার্সারিতে কাজ করে ১১ জন মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর